নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। এ পরিস্থিতিতে সারা দেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট-ডাকাতি ও নৈরাজ্য প্রতিহত করতে তৃণমূলে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতাকর্মীরা। দলীয় সবোর্চ্চ ফোরাম থেকেও সব সাংগঠনিক জেলায় কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সারাদেশে শৃঙ্খলা কমিটি করে দায়িত্বও পালন করছেন তারা।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি গোষ্ঠী সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা নানা অপকর্ম করছে। তবে এসব আর করতে দেয়া যাবে না। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপি নেতাকর্মীরা এসব ঠেকাতে পাড়া-মহল্লায় পাহারায় রয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপি সারা দেশে সজাগ রয়েছে। কেউ যাতে কোনো রকম অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে-এ ব্যাপারে আমরা প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমাদের কাছে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ সমান।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, গত প্রায় ১৬ বছর শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দেশের মানুষ দমবন্ধ করা একটি পরিবেশের মধ্যে ছিলেন। গুম, খুন, হামলা, মামলা, নির্যাতন ও চাঁদাবাজিতে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ ছিলেন। সেখান থেকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্যদিয়ে একটি মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, এতদিন যারা নির্যাতন করেছেন, তাদের ওপর দেশের মানুষ ক্ষোভ ঝাড়ছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, নেতাকর্মী বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আওয়ামী লীগ নেতা হিসাবে আক্রান্ত হলেও কিছু গণমাধ্যম তাদের সংখ্যালঘু হিসাবে চিহ্নিত করে পাশের দেশ ভারতকে ক্ষুব্ধ করার চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের পুলিশ বাহিনীকে দলীয় বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করার ফলে প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এই সরকারকে দ্রুত পুলিশকে কার্যকর করতে হবে। সেজন্য কি পদক্ষেপ সরকার নিবে বা নিয়েছে সেটাই বড় প্রশ্ন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, আমরা মহান স্বাধীনতার পর ২০২৪ সালে আবার দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা পেয়েছি এটা বাস্তব কথা। আমরা দম ফেলতে পারতাম না। এখন প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে পারছি এ জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করি। ৫ আগস্ট আমরা ঢাকায় ছিলাম। এই সরকারের পতনের পর ৬ তারিখে এলাকায় যাই।
তিনি বলেন, এলাকায় গিয়ে প্রথমেই যেই বিষয়টিতে মনোনিবেশ করেছিলাম তা হচ্ছে কোনো সাধারণ মানুষের ঘর বাড়িতে যেন আক্রমণ না হয়। কোনো দোকানে যেন আক্রমণ না হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে যেন আক্রমণ না হয়। এমন কি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যাদের ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে, দোকান বা বসতবাড়ি রয়েছে সেখানেও যেন আক্রমণ না হয় সেই কাজটা আমরা করেছি। এ বিষয়ে দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং সিভিল প্রশাসন সম্মিলিতভাবে কাজ করেছি। যার প্রেক্ষিতে নেত্রকোনা জেলায় অনাকাঙ্খিত কোনো ঘটনা ঘটেনি। সাম্প্রদায়িক কোনো ভাইয়ের উপর আক্রমণ হয়নি।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময় দেখা যায় পট পরিবর্তনের ফলে চাঁদাবাজির একটা উৎসব শুরু হয়, এটি আমার নেত্রকোনা জেলা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছি। আমরা সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে হিন্দু-মুসলিম সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করছি। নেতাকর্মীদের প্রতিও আমরা কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছি কোনোভাবেই যেন দলের বদনাম হয় এধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে কেউ লিপ্ত না হয়, অন্যথায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সব মিলিয়ে আমাদের সৌহার্দ্যপূর্ণ যে পরিবেশ এই সম্প্রীতি যেন বজায় থাকে সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।
এই আন্দোলনে নেত্রকোনা জেলায় ৯ জন নিহত হয়েছেন জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন তারা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বর্তমানে বাসায় অবস্থান করছেন। গুলিবিদ্ধ যারা তারাও চিকিৎসা শেষে বর্তমানে সুস্থ আছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুক্তি পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কয়েকটি মামলায় ইতিমধ্যে খালাস পেয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি যুক্তরাজ্যে থেকে দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। নেতাকর্মীরাও ‘মিথ্যা’ মামলা থেকে নিষ্কৃতি পাচ্ছেন, কারাগার থেকে বের হয়ে আসছেন। সব মিলিয়ে সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি উদ্দীপ্ত ও চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে।