মো. শফিকুল ইসলাম : বিএনপির চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার তৃতীয় দফায়ও ৬ মাসের সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। আগে দুই দফায় মুক্তি মিললেও সরকারের শর্ত সহ নানা কারণে তার উন্নত চিকিৎসাও হয়নি। তবে পরিবারের ‘বিশেষায়িত চিকিৎসার’ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে সরকার। এখন দেশের ভেতরে যে কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন বলে জানা গেছে। সরকারের এই আদেশের কপি হাতে পাওয়ার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হবে নাকি বাসায় রেখেই চিকিৎসা দেয়া হবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি পরিবার ও বিএনপি নেতারা।
এদিকে, দেশে করোনা শনাক্তের হার আবারো ঊর্ধ্বমুখি। এ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা কতটা কার্যকর হবে এ নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন চিকিৎসক, পরিবারের সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা।
বিএনপির কেন্দ্রয়ী নেতৃবৃন্দ ও পরিবারের সদস্যরা বলেন, সম্প্রতি দেশে করোনার ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এমন সময়ে বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া কতটুকু নিরাপদ হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ও সিদ্ধান্তহীনতা ভুগছেন তারা। ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার জন্য করোনা ভাইরাস অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। বর্তমানে পরিবারের সদস্য ও চিকিৎসকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার বাসায় আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু হাসপাতালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কতটুকু নিশ্চিত করা যাবে তাও বলা যাচ্ছে না। অন্যদিকে তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিলে হাসপাতালে ভর্তি করানোও জরুরি।
খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ও দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, সরকারের সাজা স্থগিত ও এবার কি কি শর্ত থাকছে এখনও লিখিত আকারে হাতে পায়নি। লিখিতভাবে এই আদেশ পাওয়ার পর চিকিৎসক দল ও বেগম খালেদা জিয়ার মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তার পছন্দ মতো দেশের যে কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে ইউনাটেড হাসপাতালে তার পছন্দ। এখানে তার নিজস্ব বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আছেন। চিকিৎসকরা তার পরিচিত। যারা সারাজীবন উনাকে চিকিৎসা দিয়েছেন এসেছেন। এখানকার ডাক্তারদের তার বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই বাসার বাইরে চিকিৎসা নিলে তিনি এ হাসপাতালেই নেবেন। তবে আর্থারাইটিসের ব্যথা, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যার চিকিৎসা আগে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরবের রিয়াদে। ফলে এসব রোগের ফলোআপ চিকিৎসাও আগের হাসপাতালে নেওয়া গেলে ভালো হতো। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি না থাকায় তাকে এখন দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন দিন পরিবর্তনকে বলেন, বাসা থেকেই বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা নিতে হবে এই অবস্থান থেকে সরকার সরে এসেছে, এটা পজেটিভ। এখন সরকারের এ আদেশ লিখিতভাবে যত দ্রুত পাওয়া যাবে তত দ্রুতই তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। চিকিৎসক দলের প্রধান খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান। তার পরামর্শ এবং খালেদা জিয়ার মতামত নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ম্যাডাম এখনো অন্যের সহায়তা নিয়ে চলাফেরা করছেন। তার হাঁটুর সমস্যা ছাড়াও হাতে ও কাঁধে ব্যথা বেড়েছে। আর অন্যান্য শারীরিক সমস্যা তো আছেই। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকেরা তাকে বাসায় এসে দেখে যান। বাসায় তো আর সব চিকিৎসা হয় না। হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক তার শারীরিক অবস্থার পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এতে তার শরীরের বিভিন্ন রোগের মাত্রা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। নিয়মিত তার রুটিন চেকআপও করা যাবে। যেটা তাকে বাসা রেখে চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়ার পরিবার আবেদনে ‘বিশেষায়িত চিকিৎসার’ কথা লিখেছিল। দেশের ভেতরে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে সরকারের তাতে কোনো আপত্তি নেই। এবার কোনো হাসপাতালও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। তিনি তার ইচ্ছামতো হাসপাতাল ও চিকিৎসক নির্বাচন করতে পারবেন। তবে বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এবিষয়ে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আমরা এখনো কিছু জানি না। আমরা লিখিতভাবে এখনো আদেশের কপি সরকারের কাছ থেকে পাইনি। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতই আছে। তার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।
বাসার বাইরে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের আপত্তি নেই, এখন তাকে কোন হাসপাতালে ভর্তি করা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন মাহমুদ টুকু বলেন, আমার মনে হয় তিনি বাসা থেকেই চিকিৎসা নেবেন। এখনও এ বিষয়ে আমাদের ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি।
তিনি বলেন, বাসায় থেকেই তার চিকিৎসা নেওয়া উচিত। পত্রিকায় দেখলাম গত কিছুদিন ধরে দেশে করোনা আক্রান্তের হার অনেক বেড়ে গেছে। বয়সের কারণে দেশে করোনা আসার পর থেকে আমিও বাসা থেকে বের হই না। এখন ম্যাডামের বয়স তো অনেক বেশি, সেটাও চিন্তা করতে হবে।
প্রসঙ্গ, দুর্নীতির মামলায় সাজার রায়ের পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হন। চলতি বছরের ২৫ মার্চ তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান। এই সময় তাঁর সাজা স্থগিত রেখেছে সরকার। আগামী ২৬ মার্চ খালেদা জিয়ার মুক্তির এক বছর মাস শেষ হবে।