প্রথমবারের মতো মোংলা বন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক রফতানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা বন্দরটির জন্য একটি ইতিহাস বটে। মূলত পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় কমে গেছে দূরত্ব ও যাতায়াত বিপত্তি। এতে করে সহজ হয়েছে রফতানি, যার ফল পেতে শুরু করেছে মোংলা বন্দর।
পদ্মা সেতুর বহুমুখী সুবিধার আলোকে ঢাকার সবচেয়ে কাছের সমুদ্রবন্দর মোংলা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকার সঙ্গে মোংলা বন্দরের দূরত্ব কমে হয়েছে ১৭০ কিলোমিটার, আর ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার। তাই সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের ফলে ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানি করায় আগ্রহী হয়েছে। শুরু করেছে এ বন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক রফতানির কাজ।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) সকাল ১১টায় বন্দর সৃষ্টির ৭১ বছর পর এই প্রথম বন্দরের ৮নং জেটি থেকে সরাসরি ইউরোপের উদ্দেশ্যে ২৭টি প্রতিষ্ঠানের রফতানিকৃত গার্মেন্টপণ্য নিয়ে পানামা পতাকাবাহী ‘এমভি মার্কস নেসনা’ বিদেশি জাহাজটি বন্দর ছেড়ে যায়।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পূর্বের সংকট কাটিয়ে মৃতপ্রায় মোংলা বন্দরে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে গতি ফিরেছে। বন্দরের সুবিধাদি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১০টি বড় প্রকল্পও বাস্তবায়িত হচ্ছে। চালু হয়েছে পদ্মা সেতু, কাজ চলছে খুলনা-মোংলা রেললাইন, ৬ লেন সড়ক, রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও খানজাহাজন আলী বিমানবন্দরের। এতে দেশ-বিদেশের ব্যাবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনার নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে মোংলা সমুদ্রবন্দরে।
চলতি বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে তার মধ্যে মোংলা সমুদ্রবন্দর অন্যতম। ঢাকার ব্যাবসায়ীরা এই প্রথম মোংলা বন্দর দিয়ে পণ্য রফতানি শুরু করেছে। ঢাকার ফকির এপারেলস লি., উইন্ডি এপারেলস লি., কে.সি লিনজেরিয়া লি., আর্টিস্টিক ডিজাইন লি., নিট কনসার্ন লি., মেঘনা নিট কম্পোসিট লি. ও শারমিন এপারেলস লি. সহ মোট ২৭টি কোম্পানি বাচ্চাদের তৈরি পোশাক, জার্সি ও কার্ডিগান, টি-শার্ট, ট্রাউজারসহ প্রায় ১৫ ধরনের পণ্য রফতানি করছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) সকাল ১১টায় এসব পণ্য নিয়ে পানামা পতাকাবাহী এমভি মার্কস নেসনা নামক জাহাজটি বন্দর ত্যাগ করেছে। বন্দরের ৮নং জেটি থেকে ইউরোপর পোল্যান্ড উদ্দেশে রওনা হওয়ার ৫-৭ দিনের মধ্যে ওই দেশের বন্দরে জাহাজটি পৌঁছাবে বলে জানায় রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামান অ্যান্ড সন্স।
এ বন্দরে জাহাজের পণ্য হ্যান্ডলিং দ্রুত ও নিরাপদে হওয়ায় এবং ঢাকার সাথে এ বন্দরের দূরত্ব কম হওয়ায় সময় ও অর্থ দু’য়েরই সাশ্রয় হয়। এতে করে ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি করায় আগ্রহী হয়েছে। তৈরি পোশাক রফতানির কার্যক্রম শুরু হওয়ায় এ বন্দরের গুরুত্ব আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন বন্দরসংশ্লিষ্টরা।
মোংলা বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, মোংলা বন্দররে জন্য আজকে একটি স্মরণীয় দিন। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ১ মাসের মধ্যে সেতু হয়ে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে তৈরি পোশাক রফতানির নবযাত্রা শুরু হলো। বিভিন্ন গার্মেন্টস কোম্পানির কন্টেইনার নিয়ে সরাসরি বন্দর হতে পোল্যান্ডের উদ্দেশে এ পণ্য রফতানি হচ্ছে। ভবিষ্যতে আমদানি-রফতানির এ ধারা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানান বন্দর চেয়ারম্যান।
বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন আর সহায়তা পেলে মোংলা বন্দর ব্যবহারে আরে আগ্রহী হবে আমদানি-রফতামিকারক ব্যাবসায়ীরা। ফলে কর্মচঞ্চল হবে মোংলা বন্দর, বৃদ্ধি পাবে সরকারের রাজস্ব- এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।