চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দক্ষিণ পাহাড়তলীর ঠাণ্ডাছড়ি এলাকায় অনেকটা জঙ্গলপূর্ণ ও ঘনবসতি এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে আল রাজি রাসায়নিক হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড উৎপাদনের কারখানাটি। এটি স্মার্ট গ্রুপের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। সীতাকুণ্ডের বি এম ডিপোও একই মালিকের।
অভিযোগে জানা যায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে নকশা অনুমোদন ও ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পর্যটন এলাকায় হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড তৈরির রাসায়নিক কারখানাটি। সেই সঙ্গে কারখানাটিতে বর্জ্য পরিশোধনের জন্য নেই কোনো ইটিপি।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আবু ঈসা আনসারি বলেন, মাস্টার প্ল্যানে ঠাণ্ডাছড়ি এলাকাটিকে পর্যটন ও বিনোদন এলাকা হিসেবে উল্লেখ করা আছে। সিটিতে কোনো নকশার অনুমোদন ও ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র কোনো কিছুই তারা পাননি। তারা চেষ্টা করেছিলেন, তবে জায়গাটা যেহেতু ট্যুরিজম জঙ্গলপূর্ণ ও ঘনবসতি উল্লেখ করা আছে তাই আইনগতভাবে আমরা অনুমোদন দিতে পারিনি।
এদিকে ২০২১ সালে পরিবেশের ছাড়পত্র নিয়ে আল রাজি কেমিক্যাল কারখানাটি কার্যক্রম শুরু করলেও শর্ত অনুযায়ী তরল বর্জ্য পরিশোধন করতে বসানো হয়নি ইটিপি বলে জানান চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মিয়া মাহমুদুক হক।
তিনি বলেন, ২০২২ সালে তাদের ছাড়পত্রের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর নবায়নের জন্য যখন আসে। যখন দেখলাম তারা ইটিপি করেনি, তখন তাদের একটি চিঠি দেয়া হয়। তাদের ইটিপির ড্রয়েং ডিজাইন সাবমিটের জন্য বলা হয়। তারা ড্রয়েং ডিজাইন সাবমিট করেন, তবে সেখানে কিছু সমস্যা ছিল। পরে চিঠি দিয়ে সেগুলো ঠিক করে আবারও সাবমিট করার কথা বলা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারি না। সবসময় ভয়ে থাকি কারখানার কারণে। কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাস ছড়ায়; বিকট শব্দ আসে।
এদিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কারখানাটি গড়ে তোলায় সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের পর আতঙ্ক বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তবে রাসায়নিক কারখানাটির কর্মকর্তার দাবি, আগুন ধরার আর কোনো আশঙ্কা নেই।
আল রাজি রাসায়নিক কারখানা প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আসিফ বলেন, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থেকে কখনো আগুন ধরে না। অন্যকিছু থেকে আগুন ধরতে পারে; তবে আমাদের কেমিক্যাল থেকে কোনো আগুন ধরেনি।
আল রাজি রাসায়নিক কারখানার সিকিউরিটি ইনচার্জ মো. কবির বলেন, আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ নিরাপত্তা আছে। চট্টগ্রাম সেফটির কর্মকর্তারা জানেন, দিয়াশলাইয়ের কাঠিতেও ওই কেমিক্যালে আগুন ধরে না। সীতাকুণ্ডে ঘটনা নাশকাত হতে পারে।
রাসায়নিক কারখানাটির জন্য সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সিটি করপোরেশনের জায়গায় সড়ক করে দেন। এমন অভিযোগ করে বর্তমান মেয়রের দাবি, কারখানাটি দ্রুত সরিয়ে নেয়া হোক।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর সব দেশে কেমিক্যাল কারখানা আছে, আমাদের দেশেও থাকবে তবে জনবসতিতে নয়। যেখানে জনবসতি আছে সেখানে কেমিক্যাল কারখানা করাটা কোনো অবস্থায় সমিচিন হবে না। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছি, এ ঘটনার জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করেছি। আমি মালিকপক্ষের সঙ্গে কথাও বলেছি। সেখানে মাঝে মধ্যে বিকট আওয়াজ হয়। এভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।
কাস্টমসের তথ্য মতে, কারখানা থেকে দুই বছরে প্রায় নয় হাজার মেট্রিক টন হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রফতানি করা হয়েছে।