নানা অভিযোগ আর যোগ মাথায় নিয়ে আজ বিদায় নিচ্ছে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ কমিশন তাদের মেয়াদের পাঁচ বছরে অনিয়ম, দুর্নীতি, পক্ষপাত, বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনসহ নিজেদের মধ্যে কলহের নানা নেতিবাচক কথার ও কাজের নজির সৃষ্টি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলই শুধু নয়, নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
এই পাঁচ বছরে অসংখ্যবার এ কমিশনের পদত্যাগের দাবি করে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে ইসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের দাবিও করেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। ইসির বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শরিকরাও সংসদের বৈঠকে সমালোচনায় মুখর ছিলেন। এসব সমালোচনা কখনোই আমলে নেয়নি ইসি।
সব কিছু পাশ কাটিয়ে গতকাল রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, নিরপেক্ষতা এবং সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা।
২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নেওয়া বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি)। এ উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে তারা বিদায়ী সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
আজ সন্ধ্যায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে বিদায় অনুষ্ঠান করবেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বিদায় নেবেন।
সিইসি বেলা ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে।
এর আগে গতকাল রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে নির্বাচন কমিশনের এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নিরপেক্ষ ও সফলতার সঙ্গে পুরো পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
আইনের মধ্যে থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছেন। কমিশনের সফলতা বা ব্যর্থতা নিয়ে নিজের মূল্যায়ন জানতে চাইলে সিইসি বলেন, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছে কমিশন। কারও কথায় নয়, আইনের শাসনের মধ্যে থাকার চেষ্টা ছিল তাদের। আর একটা পদের জন্য নির্বাচন করেন সাতজন, পাস করেন একজন। তাই সমালোচনা তো হবেই। বলেন, কমিশন সাফল্যের সঙ্গেই কাজ করেছে। সব কটি নির্বাচন শেষ করতে পেরেছে। একটা নির্বাচনও বাকি নেই।
এদিকে সংবিধানের নির্দেশনা মোতাবেক ইসির মেয়াদ পাঁচ বছর। সে হিসাবে আজ বর্তমান ইসির শেষ দিন। নতুন ইসি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। ইসি নিয়োগ আইনানুযায়ী, নতুন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে। এই কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম সুপারিশ করার জন্য প্রাসঙ্গিক কাজ গুছিয়ে আনছে। এ ১০ জনের তালিকা থেকেই সিইসিসহ নতুন কমিশনের পাঁচজনকে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। সার্চ কমিটি গঠনের পর থেকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এই নাম পাঠাতে হবে। সেই হিসাবে নাম সুপারিশের জন্য আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় পাচ্ছে কমিটি।
তবে সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দু-এক দিনের মধ্যেই নতুন ইসি শপথ নিতে পারে। সার্চ কমিটির কাজ শুরুর দিনেই মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছিলেন, ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় থাকলেও সার্চ কমিটি আগেই কাজ শেষ করবে।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ: ভবিষ্যতের সব নির্বাচন আরও সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গতকাল সন্ধ্যায় সিইসি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানম বিদায়ী সাক্ষাৎ করতে গেলে রাষ্ট্রপতি এ আশা ব্যক্ত করেন।
পরে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে বলেন, সাক্ষাৎকালে নির্বাচনী কার্যক্রমসহ কমিশনের বিভিন্ন কার্যক্রম ও উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা হয়। তারা দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রপতির সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
এ সময় রাষ্ট্রপতিকে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ সংবলিত জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হয় এবং সিইসির পক্ষ থেকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ ও জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন-২০২১-এর বাংলা পাঠ হস্তান্তর করা হয়।
প্রেস সচিব জানান, রাষ্ট্রপতি বলেন, নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশন মুখ্য ভূমিকা পালন করে। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দল ও জনগণের সহযোগিতা অপরিহার্য। তাই নির্বাচন কমিশনকে নির্বাহী বিভাগ, রাজনৈতিক দল ও জনসাধারণের সহযোগিতা নিয়ে কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের সহযোগিতায় নির্বাচন কমিশন স্থানীয় পর্যায়সহ সব নির্বাচন আরও সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যভাবে অনুষ্ঠানে সক্ষম হবে।
এ সময় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন, সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান এবং নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন।