বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার যৌক্তিকতা নেই: মার্কিন কংগ্রেসম্যান

1411
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের জোরালো সম্পর্কে সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেস সদস্য ও প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রধান গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস।

শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমি মনে করি না, বর্তমানে বাংলাদেশের ওপর পাইকারি নিষেধাজ্ঞার কোনো যৌক্তিকতা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা তখনই কার্যকর হয়, যখন তা লক্ষ্য অনুসারে থাকে।

এ সময়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে কাজ করতে আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন এই কংগ্রেস সদস্য। এছাড়া বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, তা নিশ্চিতেও কাজ করতে উন্মুখ তিনি।

তবে গ্রেগরি মিকস বলেন, গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্টের অধীনে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ও এটির সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাতে সমর্থন করছি।

এদিকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার অপতৎপরতা থেমে নেই। গত ১০ ডিসেম্বর র‌্যাব ও তার ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একতরফাভাবে নিষেধাজ্ঞার পরে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার নিজেও বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন।

এছাড়া কয়েকটি এনজিও ও মানবাধিকার সংগঠনের জাতিসংঘকে দেওয়া চিঠিতে নতুন অপতৎপরতার কথা জানা গেছে। ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর জাতিসংঘের শান্তি মিশনে র‌্যাবকে নিষিদ্ধ করতে চিঠি দেয় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন (এনফ্রেল) ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বেশি কয়েকটি বিদেশি সংগঠন। চিঠি দেওয়ার পর আড়াই মাস পার হলেও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অপারেশনস বিভাগ থেকে আনুষ্ঠানিক সাড়া মেলেনি।

এদিকে এসব সংস্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের অভিযোগ রয়েছে। কোনো কোনো সংস্থা ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে নীরব থাকলেও বাংলাদেশ নিয়ে সরব রয়েছে। আবার কোনো সংস্থা নিজেরাই মানবাধিকার লঙ্ঘনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময়েও এসব সংস্থা ন্যাক্কারজনকভাবে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার চালিয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে অপচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে চিঠিতে সই করা ব্যাংককভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনের (এনফ্রেল) বিরুদ্ধে।

২০১৮ সালের নির্বাচনে এনফ্রেল ৩২ প্রতিনিধি পাঠানোর কথা জানিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে যথাসময় ছাড়পত্র ও ভিসা না পাওয়ার অভিযোগ তুলে তারা পর্যবেক্ষক না পাঠানোর কথা জানায়। পরে এ নিয়ে হতাশা ও অসন্তোষ ব্যক্ত করতে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রকে।

এনফ্রেল ব্যাংককভিত্তিক সংস্থা হলেও অর্থায়ন করে ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট।

আবার দুর্নীতি ছাড়াও অ-পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ রয়েছে। এশীয় দেশগুলোর মানবাধিকার নিয়ে তারা সক্রিয় থাকলেও পশ্চিমাদের অপরাধ নিয়ে তাদের তেমন প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না।

অ্যামনেস্টির অভ্যন্তরীণ কর্মপরিবেশ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অবহেলা, উত্ত্যক্ত ও অমর্যাদার শিকার হয়ে ২০১৮ সালে সংস্থাটির দুই কর্মী আত্মহত্যা করেছিলেন।

অ্যামনেস্টির কর্মীরা বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কাজ করলেও নিজেদের কর্মস্থলে তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ২০২০ সালে অর্থনৈতিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ভারতে অ্যামনেস্টির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছিল।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিরুদ্ধেও অভিযোগের কমতি নেই। সংস্থাটি মার্কিন সরকারের নীতির মাধ্যমে গভীরভাবে প্রভাবিত হলেও দাবি করা হচ্ছে। ব্রিটিশ দৈনিক টাইমস বলছে, মানবাধিকার চর্চার ক্ষেত্রে এইচআরডব্লিউ সবসময় স্বচ্ছতা, সহনশীলতা ও জবাবদিহিতার চর্চা করে না। কোনো কোনো অঞ্চলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তারা সচেতনভাবে এড়িয়ে যায়।

এছাড়া যুদ্ধাপরাধের বিচারের আগে-পরে বাংলাদেশের জন্মের সময়ে নির্বিচারে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে, শুধু তাদের মানবাধিকার কোনোভাবে লঙ্ঘন হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে আলোকপাত করতে দেখা গেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টিকে। যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধেও তারা বাংলাদেশকে সুপারিশ করেছিল।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন