মাসে নির্যাতনের শিকার ১৫৪ সাংবাদিক, গুলিতে মৃত্যু ১
দেশে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ১৫৪ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হামলা-মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। একইসঙ্গে একজন সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাও গেছেন।
এছাড়া জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর- এই নয় মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে এবং ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৪৮ জন মারা গেছেন। পাশাপাশি মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক হাজার ৮৫ জন নারী।
শুক্রবার (১ অক্টোবর) মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ১০টি জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন অনলাইন নিউজপোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ ও আসকের নিজস্ব সূত্র থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একজন সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং ১৫৪ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হামলা-মামলা ও হয়রানির শিকার হন। এরমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটজন, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাধ্যমে ১৪ জন, স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১৩ জন, হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে ১৩ জন সাংবাদিক আহত হন। এছাড়া ১০৬ জন সাংবাদিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও সন্ত্রাসীদের হাতে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে এবং ‘ক্রসফায়ারে’ মোট ৪৮ জন মারা গেছেন। এরমধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ও ‘গুলিবিনিময়’ এ নিহত হয়েছেন ৩৪ জন। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নয়জন ও নির্যাতনে চারজন মারা গেছেন। এছাড়া গ্রেপ্তারের পর হার্ট অ্যাটাকে (পুলিশের ভাষ্যমতে) একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া কারাগারে অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে মারা গেছেন ৬৭ জন।
এদিকে গত ৯ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক হাজার ৮৫ নারী, যার মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮৭৯ জন এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৩ জন নারী। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৯ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ৮ জন নারী।
গত বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ২৫৬টি। আর ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৭৫ জন নারী। এ ছাড়া গত ৯ মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১০১ নারী, এর মধ্যে ১০ নারী আত্মহত্যা করেছেন এবং হত্যার শিকার হয়েছেন ৩ নারী। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৭১ জন পুরুষ, যার মধ্যে ৪ জন খুন হয়েছেন। এ ছাড়া গত ৯ মাসে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫২৭ নারী। যাদের মধ্যে স্বামী, স্বামীর পরিবার এবং নিজ পরিবারের হত্যার শিকার হন ৩০৩ নারী এবং পারিবারিক নির্যাতনের ফলে আত্মহত্যা করেছেন ১১৮ নারী।
অন্যদিকে যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছেন মোট ১৮২ নারী। যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬০ জনকে এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন নারী। এর মধ্যে যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৯৮ জন।
গত নয় মাসে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১ হাজার ৬৩৬ শিশু। এরমধ্যে হত্যার শিকার হন ৪৭১ জন এবং শারীরিক ও যৌন নির্যাতনসহ নানাভাবে সহিংসতার শিকার হন এক হাজার ১৬৫ শিশু। এই ১১৬৫ জনের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয় ৬৪৮ কন্যাশিশু এবং বলাৎকারের শিকার হয়েছে ৬৪ জন ছেলে শিশু। গত বছরের একই সময়ে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল এক হাজার ৫২৩ শিশু।
আর একই সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৩২১টি। এতে নিহত হয়েছেন ৬৪ জন এবং আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৪০৫ জন। এর মধ্যে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা ও সংঘর্ষের ১৬৭টি ঘটনায় আহত হয়েছেন এক হাজার ৯৪২ জন এবং নিহত হন ৩০ জন। একই সময়ে ভারত সীমান্তে নিহত হয়েছেন মোট ১১ জন।