তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকেই ভেঙে পড়তে শুরু করেছে আফগানিস্তানের অর্থনীতি।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের অস্বীকৃতি আর দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে থাকা প্রায় ১০০ কোটি ডলার অর্থ জব্দ করে রাখায় বেহাল দশা হয় দেশটির অর্থনীতির। এ অবস্থায় আফগানিস্তানের ব্যাংকিং ব্যবস্থা যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে। এমন আভাস দিয়েছে আফগানিস্তানের ব্যাংকসংশ্লিষ্টরা।
ইসলামিক ব্যাংক অব আফগানিস্তানের প্রধান নির্বাহী সাইয়েদ মুসা কালিম আল ফালাহি জানান, দেশটির অর্থনৈতিক শক্তিগুলো বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটের মুখে। গ্রাহকরা আতঙ্কিত হওয়ায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে আতঙ্কে দেশের সাধারণ মানুষ ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করছেন। যে পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করা হচ্ছে তার বিপরীতে জমা পড়ছে বিরল। অনেক ব্যাংকই আর কার্যকর থাকছে না একই সঙ্গে নগদ অর্থ না থাকায় তারা কোনো সেবা দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতেও নেই।
দুবাই থেকে এমন মন্তব্য করেছেন সাইয়েদ মুসা কালিম আল ফালাহি।
কাবুলে অস্থিরতা বিরাজ করায় তিনি বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন। তালেবানের ক্ষমতা দখলের আগেই আফগানিস্তানের অর্থনীতি নড়বড়ে অবস্থায় ছিল। দেশটির আর্থিক সংস্থানের একটি বড় অংশই নির্ভর করত আন্তর্জাতিক অর্থ সহায়তার ওপর।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানের জিডিপির ৪০ শতাংশই আসত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থ সহায়তা থেকে।
তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই পশ্চিমা দেশগুলো আফগানিস্তানে দেওয়া বিভিন্ন সহায়তা স্থগিত করে দেয়। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএম এফ) রিজার্ভে থাকা দেশটির যাবতীয় সম্পদ জব্দ করা হয়।
মুসা কালিম জানান, এমন অবস্থায় অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে বিকল্প সহায়তার উৎস খুঁজতে হচ্ছে তালেবানকে। বর্তমানে আর্থিক সহায়তার জন্য চীন ও রাশিয়ার পাশাপাশি অন্যান্য দেশের দিকে তাকিয়ে আছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
এরই মধ্যে তালেবানের সঙ্গে কাজ করতে এবং আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে সহায়তার জন্য চীন প্রস্তুত বলে জানিয়েছে দেশটি। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানা যায়, আফগানিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে চীনের। চীন এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালনে আগ্রহী।
এর মধ্যে আফগানিস্তানের জন্য খাদ্য সহায়তা ও করোনা টিকাসহ প্রায় ২ হাজার কোটি ইউয়ান (৩ কোটি ১০ লাখ ডলার) সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। এ সহায়তার পরও দেশটির বর্তমান অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে বেশ চাপে আছে তালেবান। বর্তমানে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার বেশ ঊর্ধ্বমুখী। ডলারের বিপরীতে আফগান মুদ্রার দরপতন হয়েছে অনেক। বেকার হয়েছেন অনেক মানুষ। তাদের কাছে নগদ অর্থের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, আফগানিস্তানের মাত্র ৫ শতাংশ পরিবারের কাছে দৈনিক চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত খাবার আছে। জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেক পরিবারই জানিয়েছে যে গত দুই সপ্তাহে তাদের কাছে মজুত থাকা খাবার অন্তত একবারের জন্য হলেও শেষ হয়ে গিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, কিছু শর্ত পূরণ করলেই তারা তালেবানের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নে প্রস্তুত আছে। এর মধ্যে আছে নারী ও সংখ্যালঘুদের প্রতি তালেবানের প্রতিশ্রুত নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন।