কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (২৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কাজের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
কক্সবাজার বিমানবন্দর প্রান্তে যুক্ত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান, বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান, কক্সবাজারের সংসদ সদস্যবৃন্দ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করা হলে প্রাচ্য ও পাশ্চত্যে চলাচল করা বিমানবন্দরগুলোর রিফুয়েলিং পয়েন্ট হিসেবে রূপান্তরিত হবে। বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে বৈশ্বিক যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হবে কক্সবাজারকে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র বানাতে কক্সবাজারে বিদেশিদের জন্য আলাদা জোন বা এলাকা তৈরি করে দেওয়া হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, বিশ্বে সবচেয়ে বড় বড় বিমান যাতে কক্সবাজার বিমানবন্দরে নামতে পারে, সেভাবেই রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজ করা হবে। কক্সবাজারকে আরও আধুনিক বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলব। যাতে বিদেশিরা এখানে এসে দেশকে উপভোগ করতে পারে। এর ফলে আর্থিকভাবে আমরা অনেক সচ্ছল হবো।
তিনি বলেন, এই রানওয়ে সম্প্রসারণ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। আমাদের অনেক পরিবেশবিদ রয়েছে, তারা সব কিছু ওপর লাফ দিয়ে পড়ে। কোন বিষয়ে আগা-মাথা বুঝে না। তাদের প্রতিবাদ করাটাই বড় কথা। যাই হোক সবকিছুই মোকাবিলা করে এই রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। জনগণকে দেওয়া ওয়াদার একধাপ এগিয়ে যাচ্ছি।
নির্ধারিত সময়ে মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজ শেষ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে আমি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দিয়েছি। ১০০ বছরের ডেল্টা প্লান করে দিচ্ছি। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ হবে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে ইশতেহারে ঘোষণা করেছিলাম ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যআয়ের দেশে পরিণত হবো। এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটাকে ধরে রেখে আমাদের উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
জানা গেছে, কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে ৯ হাজার ফুট। আরো ১ হাজার ৭০০ ফুট সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। সম্প্রসারিত হতে যাওয়া রানওয়ের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ ফুটই থাকবে সমুদ্রের ওপর।
প্রথমে সাগরের নিচে স্থাপন করা হবে জিওটিউব, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করা হবে পানি। শুরু হবে খনন প্রক্রিয়া ও বালু ভরাট কার্যক্রম। এরপর প্রাথমিক পর্যায় হতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে হবে বালুর স্তর বিন্যাস। চূড়ান্ত পর্যায়ে হবে রানওয়ের জন্য বালুর স্তর বিন্যাস। তারপর হবে পাথরের স্তর বিন্যাস এবং নিশ্ছিদ্রকরণ ও পিচ ঢালাই। এভাবেই তৈরি হবে রানওয়ে এবং প্রাথমিক সমুদ্র হতে রক্ষাকারী বাঁধ। এর পরপরই হবে রানওয়ের শোভাবর্ধন ও নির্দেশক বাতি স্থাপন।
সমুদ্র তলদেশের ওপর ব্লক তৈরি করে এর ওপর স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। দেশে এই প্রথম কোন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে এই প্রক্রিয়ায়। সমুদ্রের কিছু অংশ ভরাট করে সেখানে নির্মাণ করা হবে রানওয়ে। সমুদ্র ছুঁয়ে আকাশে উড়বে বিমান।
সমুদ্রবক্ষের ওপর নির্মিতব্য এক হাজার ৭০০ ফুটের রানওয়ের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। যার পুরোটাই অর্থায়ন করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
বেবিচক জানায়, আগামী ৫০ বছরের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বিশেষ এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজ শেষ হলেই এখানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ওঠানামা করতে পারবে ৩৮০টির মতো সুপরিসর এয়ারবাস। এই রানওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারের পর্যটন ও অর্থনৈতিক বিকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। এই বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক অ্যাভিয়েশন হাব হিসেবে ব্যবহার হবে। আন্তর্জাতিক টার্মিনাল হবে, বিদেশি পর্যটকেরা সরাসরি কক্সবাজার আসার সুযোগ পাবেন। ফলে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরও গতিশীলতা আসবে।