রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিধান নেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অধ্যাদেশে

138
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিদেশে বসে কেউ মানবতাবিরোধী অপরাধ করলেও তা আমলে নেওয়ার বিধান রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অধ্যাদেশের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এখন রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করলে এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, অধ্যাদেশের খসড়া থেকে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা কক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এবং ‘দ্য বাংলাদেশ ল অফিসার (অ্যামেন্টমেন্ট) অর্ডিন্যান্স, ২০২৪’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে যান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার বেলা ১১টায় সচিবালয়ে আসেন এবং প্রথমবারের মতো সেখানে অফিস করেন তিনি। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান।

গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকগুলো রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা এবং তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে হয়েছে। বুধবার প্রথম সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়।

সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চাইলে শুনানির অডিও ও ভিডিও রেকর্ড রাখতে পারবে। তবে গণমাধ্যমের জন্য সম্প্রচারের ব্যবস্থা থাকবে না। বাংলাদেশের বাইরে অপরাধ করলে ট্রাইব্যুনাল আমলে নিতে পারবে। এতদিন শুধু বাংলাদেশের ভেতরে সংঘটিত অপরাধকে আমলে নিতে পারত ট্রাইব্যুনাল। এখন থেকে আসামি চাইলে বিদেশ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধগুলোর সংজ্ঞা যুগোপযোগীকরণ, অপরাধের দায় নির্ধারণ, অডিও ও ভিডিওর মাধ্যমে বিচারকাজ ধারণ ও সম্প্রচার, বিদেশি কাউন্সেলের বিধান, বিচারকালে অভিযুক্তের অধিকার, অন্তর্বর্তীকালীন আপিল, সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রাসঙ্গিকতা-সংক্রান্ত বিধান, তদন্তকারী কর্মকর্তার তল্লাশি ও জব্দ করার বিধান, পর্যবেক্ষক, সাক্ষীর সুরক্ষা, ভিকটিমের অংশগ্রহণ ও সুরক্ষার বিধান সংযোজন করে সংশোধনীর খসড়া করা হয়েছে।

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আইনের খসড়া থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধ বা গণহত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলকে বিচারের আওতায় আনার জন্য আইসিটি আইনের সংশোধিত খসড়ায় একটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছিল। কোনো রাজনৈতিক দলের বিচার প্রচলিত অন্যান্য আইনে যেমন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা সম্ভব। সরকার চেয়েছে আইসিটি আইন নিয়ে কোনো বিতর্ক না হোক। তবে অন্যান্য আইনে তা বহাল থাকবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়া বিভিন্ন প্রসিদ্ধ আইনজীবী এবং হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। সব মতামতের ভিত্তিতে আমরা একটা খসড়া করেছি। এটি উপদেষ্টা পরিষদে উত্থাপন করা হয়েছিল। এটি উপদেষ্টা পরিষদে গৃহীত হয়েছে। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদে। উপদেষ্টা পরিষদ মনে করেছে আমরা যে আইনের সংশোধনীটা করেছিলাম সেখানে রাজনৈতিক দলকে শাস্তি দেওয়ার বিধান ছিল। খসড়ায় বলা ছিল, আদালত যদি মনে করেন তারা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কনসার্নড অথরিটির (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ) কাছে সুপারিশ করতে পারেন।

এদিকে সভায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মানবাধিকার সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং মানবাধিকার যথাযথভাবে নিশ্চিত করার লক্ষে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়। ওই আইনের ধারা ৫ অনুযায়ী একজন চেয়ারম্যান, একজন সার্বক্ষণিক সদস্য এবং ৫ জন অবৈতনিক সদস্য সমন্বয়ে মানবাধিকার কমিশন গঠনের বিধান রয়েছে। বিগত ৭ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, একজন সার্বক্ষণিক সদস্য ও ৪ জন অবৈতনিক সদস্য তাদের স্বীয় পদ হতে পদত্যাগ করেন। মানবাধিকার কমিশনের অন্য একজন অবৈতনিক সদস্য গত ২২ আগস্ট পদত্যাগ করেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা পদত্যাগ করায় কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ দেওয়ার জন্য আইনের ৭ ধারার অধীনে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সভাপতিত্বে একটি বাছাই কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। ওই বাছাই কমিটিতে জাতীয় সংসদের স্পিকার মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং অন্য একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য মনোনয়নের বিধান রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে যাওয়ায় এবং সংসদের স্পিকার পদত্যাগ করায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের জন্য বাছাই কমিটি সংক্রান্ত বিধান সংশোধন করা প্রয়োজন।

সভায় দ্য বাংলাদেশ ল অফিসার (অ্যামেন্টমেন্ট) অর্ডিন্যান্স, ২০২৪-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিজ্ঞ, দক্ষ ও যোগ্য অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের মাধ্যমে বিদ্যমান অ্যাটর্নি সার্ভিসকে শক্তিশালী করা আবশ্যক। এ উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ‘দ্য বাংলাদেশ ল অফিসার্স অর্ডার ১৯৭২’-এর অধিক সংশোধন সমীচীন ও আবশ্যক। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮(৩)-এর অধীন সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় রয়েছে এবং অভিজ্ঞ, দক্ষ ও যোগ্য অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগে আশু ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন