তিন মাসেও কাঙ্খিত গতি ফেরেনি প্রশাসনে, কয়েকটি মন্ত্রনালয়ের কাজে স্থবিরতা

57
শেয়ার করতে ক্লিক করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ছাত্র গণ আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চরম বিশৃঙ্খলায় জনপ্রশাসনে স্থবিরতা তৈরি হয়েছিল। অন্তর্র্বতীকালীন সরকার বঞ্চিতদের পদোন্নতির পাশাপাশি ভাল পদায়নসহ নানা পদক্ষেপ নিলেও গত তিন মাসে প্রশাসনে কাঙ্খিত গতি ফেরেনি। উপদেষ্টারা ঠিকমতো সময় দিতে না পারায় বেশ কয়েকটি মন্ত্রনালয়ের কাজেও বিরাজ করছে স্থবিরতা। বিগত সরকারের আমলে শীর্ষ পদে থাকা কর্মকর্তাদের ওএসডি ও বাধ্যতামুলক অবসরে পাঠানোর পাশাপাশি বিভিন্ন মামলায় কয়েকজন সাবেক সচিব গ্রেফতার হওয়ায় কর্মকর্তাদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিগত সরকার আমলে পদোন্নতি ও ভাল দায়িত্ব পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে ওএসডি বা চাকরি চলে যাওয়ার ভয় থাকায় পুরোদমে কাজে মনোযোগী হতে পারছেন না অনেকে। একই অবস্থা মাঠ প্রশাসনেও। এছাড়া নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয় ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগে বর্তমানে কোনো সচিব না থাকায়ও কাজে বিঘ্ন হচ্ছে। এসব কারনে সরকারের যাবতীয় কাজের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন জনপ্রশাসন বিশ্লেষকরা।
তবে এই অল্প সময়ের মধ্যে অন্তবর্তীকালিন সরকার প্রশাসনকেন্দ্রিক বেশ কিছু নতুন ভাল উদ্যোগও নিয়েছে। সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করার নির্দেশনা জারি করেছে। তবে এ বছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তা দাখিল করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে উপদেষ্টাদেরও সম্পদের হিসাব দিতে হবে এবং এজন্য একটি নীতিমালাও করা হয়েছে। এছাড়া প্রশাসন সংস্কারের জন্য সাবেক সচিব আব্দুল মূয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩২ করার পাশাপাশি বিসিএস এ ৪ বারের বেশি অংশ নেওয়া যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পলিথিনের ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগ প্রশংসা পেয়েছে। তবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো অকেজো থাকায় সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যাগুলোর সুরাহা হচ্ছে না।
সংস্লিষ্টরা জানান, বেশ কয়েকজন উপদেষ্টাকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপুর্ণ মন্ত্রনালয়ে কোন উপদেষ্টা নেই অর্থাৎ সেগুলো প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছে। এসব কারনে বেশির ভাগ মন্ত্রনালয় চলছে দায়সারা ভাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা একই সঙ্গে কৃষি মন্ত্রনালয়ের মতো একটা বড় মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে থাকায় কৃষি মন্ত্রনালয়ের কাজে অনেকটা স্থবিরতা তৈরি হচ্ছে। একই ভাবে খাদ্য মন্ত্রনালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ে আলাদা করে কোন উপদেষ্টা না থাকায় এ মন্ত্রনালয়ের কাজেও তেমন একটা গতি নেই। এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়, বানিজ্য মন্ত্রনালয়, সড়ক পরিবহন ও রেলপথ মন্ত্রনালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়সহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রনালয়ের কাজেও গতি অনেকটা কম বলে সংস্লিষ্টরা জানিয়েছেন। একারনে এসব মন্ত্রনালয়ের বেশির ভাগ কর্মকর্তা কর্মচারি রুটিন দায়িত্ব পালন করেই সময় কাটাচ্ছেন।
সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা ও যোগ্য কর্মকর্তার অভাবে এখনো তিনটি মন্ত্রনালয় ও গুরুত্বপূর্ন কয়েকটি বিভাগে সচিব পদ শূন্য রয়েছে। বিগত সরকার আমলের জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের প্রত্যাহার করে সেখানে নতুন পদায়ন করা হলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ মাঠ প্রশাসনের অন্য বেশির ভাগ কর্মকর্তা এখনো বহাল রয়েছেন। বিগত সরকারের মাঠ প্রশাসনের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে বঞ্চিতদের পদায়ন না করায় কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সমাজকল্যান মন্ত্রনালয়য়ের সচিবকে ওএসডি করার পর এ পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক পদ শূন্য রয়েছে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনেও নেই কোনো ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ‘বঞ্চিত’ দাবি করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ একযোগে আন্দোলন শুরু করেন। তড়িঘড়ি করে বঞ্চিতদের পদোন্নতি দিতে গিয়ে কিছু ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ পাওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগী কর্মকর্তাদের সরিয়ে যেখানে যোগ্য কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছ। নীতিনির্ধারণী পদগুলোতে নিয়োগ পাওয়াদের বেশির ভাগই প্রায় নতুন। তাদের বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগছে। কেউ কেউ তাদের ভুল বুঝিয়ে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টাও করছেন। আবার বিগত সরকারের দোসর কর্মকর্তারা নানা ভাবে অসহযোগিতাও করছেন। বিষয়টি নিয়ে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুইয়া সংবাদমাধ্যমকে সম্প্রতি জানান, প্রশাসনে অসহযোগিতার কারণে সরকার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। প্রয়োজন হলে সিস্টেম ভেঙে দিয়ে নতুন লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়ে সরকার কোনো ছাড় দেবে না।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নানান চ্যালেঞ্জ থাকায় তিন মাসে প্রশাসন কাঙ্ক্ষিত সফলতায় পৌছাতে পারেনি। এখনো শৃঙ্খলা পুরোপুরি ফেরানো সম্ভব না হলেও পরিস্থিতি হতাশাজনক নয়। কারণ প্রশাসনকে একটা ভালো জায়গায় নিতে এ সরকারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর ‘বঞ্চিত’ হিসেবে বিভিন্ন পর্যায়ে বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের ওএসডি করা এবং বাধ্যতামূলক অবসরেও পাঠানো হচ্ছে। গত তিন মাসে জনপ্রশাসনে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব ও উপসচিব পদে পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে শতাধিক কর্মকর্তার। ওএসডিও করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তাকে। আন্দোলনের মুখে তড়িঘড়ি করে পদোন্নতি ও পদায়ন দিতে গিয়ে অনিয়মে অভিযুক্ত কর্মকর্তারাও পদোন্নতি পেয়েছেন। বিতর্কিত কর্মকর্তাদের সচিব কিংবা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর কারনে সমালোচনাও হয়েছে।  এজন্য ভুলগুলো শুধরে বারবার সিদ্ধান্ত বদলাতে দেখা গেছে।
ডিসি নিয়োগ নিয়ে সচিবালয়ে নজিরবিহীন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন কর্মকর্তারা। তারা হাতাহাতিতেও জড়ান। তদন্ত করে বিশৃঙ্খলায় জড়িত ১৭ জন উপসচিবকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ডিসি নিয়োগ কেন্দ্র করে বিপুল অর্থের লেনদেন হয়েছে অভিযোগ করে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। অবশ্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস-উর রহমান অভিযোগ ‘মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এই অভিযোগ তদন্তে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হলেও তারা এখনো প্রতিবেদন দেয়নি। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আমলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বিষয়টি যাচাই বাছাই এর জন্য সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানকে আহ্বায়ক করে গত ১৬ সেপ্টেম্বর পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। এ কমিটির কাছে আবেদন করেছেন বঞ্চিত চার হাজারেও বেশি কর্মকর্তা।
সাবেক আমলারা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর যে পরিস্থিতিতে এ সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, সেই অবস্থা থেকে প্রশাসনকে একটা স্থিতিশীল জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দুই তিন মাস খুবই অল্প সময়। কারণ বঞ্চিতদের দাবি-দাওয়ার আন্দোলন সরকারকে অনেকটাই নাজেহাল করেছে। এসব কারনে প্রশাসন এখনো পুরোপুরি গতিশীল হয়নি। সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, তিন মাসে সরকারের নেতৃত্বের জায়গা থেকে যতটা গতি আশা করা হয়েছিল ততটা আসেনি। সাধারণ মানুষ মনে করছে, তারা সরকারের কাছে আশানুরূপ গতিটা পাচ্ছে না। তিনি বলেন, প্রশাসনে উচ্চ পর্যায় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। কাউকে পদায়ন করে আবার সরিয়ে দেওয়া এটা এক ধরনের সিদ্ধান্তহীনতা। এধরনের ঘটনা বার বার ঘটেছে। এসব বিষয় দায়িত্বশীলদের বিবেচনায় নেওয়া উচিত। তাছাড়া শূন্য থাকা সচিবের পদে জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ হওয়া উচিত।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ মিয়া বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর এ সরকার অস্বাভাবিক অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারের কাছে এতো বেশি দাবি-দাওয়া উত্থাপিত হয়েছে যা অতীতে কখনও একসঙ্গে আসেনি। এর মধ্যে কিছু যৌক্তিক দাবি থাকলেও অযৌক্তিক দাবিই বেশি। এসব দাবি দাওয়ার আন্দোলন অন্তবর্তী সরকারকে নাজেহাল করেছে। তাই তাদের কাজ পুরোপুরি সন্তোষজনক না হলেও হতাশাজনকও নয়। তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারে দায়িত্বশীলদের মধ্যে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা রয়েছে। কে কোথায় কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তা পরিষ্কার নয়। কাউকে কোথাও নিয়োগ দিয়ে আবার সরিয়ে দেওয়া হলে গোটা প্রশাসনে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়। এতে প্রশাসন অকার্যকর হয়ে যায়। অথচ এধরনের ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে।
এদিকে কোনো অনুষ্ঠানে কোনো প্রকার স্লোগান ব্যবহারে সরকারি কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিতর্ক এড়াতে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অন্যান্য অতিথিবর্গ সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করা, কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি অনুষ্ঠানের অতিথি তালিকায় থাকলে উক্ত অনুষ্ঠান পরিহার করাসহ ৯ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেছেন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে এমন সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।  যে সকল দিবস বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলো যাতে পালিত না হয় সে বিষয়ে সরকারি কর্মচারীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কোন প্রতিষ্ঠান থেকে আমন্ত্রণ এসেছে, অনুষ্ঠানের পেছনে কারা আছে, এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা নিতে প্রয়োজনে গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া পরামর্শ এবং  কোন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লিখিত বক্তব্য প্রস্তুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, প্রয়োজনীয় সকল সংস্কার শেষে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। প্রশাসনসহ দেশের সর্বস্তরে দুর্নীতি ও দলীয়করণ থেকে রাহুমুক্ত করতে সরকার কাজ করছে। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার গত ১৬ বছর দেশে অনেক অনিয়ম দুর্নীতি করেছে। অন্তর্র্বর্তী সরকার দেশকে পুনর্গঠন করার কাজ শুরু করেছে যাতে দেশ ও দেশের মানুষ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে।
সুত্র: দৈনিক সময়ের আলো।
শেয়ার করতে ক্লিক করুন