নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রীর পদে বসে স্বৈরাচার হওয়ার পথ বন্ধ করতে সংবিধানের অন্তত ১২টি অনুচ্ছেদ সংশোধন নিয়ে আলোচনা চলছে। যদিও তা কোন প্রক্রিয়ায় হবে — এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে আইনজীবীদের। কেউ বলছেন, নির্বাচিত সংসদ ছাড়া এটি সম্ভব নয়; আবার কারও মতে, গণভোটের মাধ্যমেও করতে পারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
১৯৭২ সালের পর এখন পর্যন্ত ১৭ বার কাটাছেঁড়া করা হয় সংবিধান। কখনো সময়ের প্রয়োজনে, কখনো বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে।
অনেকের মতে, বর্তমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসে যে কারও স্বৈরাচারী হযে উঠার সুযোগ রয়েছে। সে কারণে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর সংবিধান সংশোধন অথবা পুনঃলিখনের দাবি ওঠে। এ আলোকে গঠিত হয় সংবিধান সংস্কার কমিশনও। আলোচনা চলছে অন্তত ১২টি অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনার। এছাড়া, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে ফিরিয়ে আনা নিয়েও চলছে আলোচনা।
সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, মৌলিক কিছু সংশোধনীর দরকার থাকলেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলে বর্তমান সংবিধান দিয়েই বৈষম্যহীন সমাজ গঠন সম্ভব।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, রাজনৈতিক মানসিকতায় পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত করার ফলে একদলীয় সরকারকে চিরস্থায়ী করা ছাড়াও মিথ্যা নির্বাচন সাজিয়ে মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতায় জোর করে বসে থাকার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এগুলোর কারণ ছিল এক ব্যক্তির সর্বময় ক্ষমতা বিস্তার লাভের জন্য। এক্ষেত্রে সংবিধান তাকে সহায়তা করেছে, তাকে দানব বানিয়েছে- এটা আমি মনে করি না।
ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন মনে করেন, গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে অনুচ্ছেদ ৭০। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে যদি সংবিধানে বলবৎ করা যায় এবং সে অনুযায়ী যদি কার্যকরণ করা যায়, তাহলে কোনোভাবেই একনায়কতন্ত্র সরকার গঠন হতে পারে না।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-(ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’
এমন অবস্থায় কোন প্রক্রিয়ায় সংবিধান সংশোধন করা হবে — এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে আইনজীবীদের। কেউ বলছেন, সংসদ ছাড়া সম্ভব নয়, আবার কারো মতে গণভোটের মাধ্যমে হতে পারে।
ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জনগণের যদি সমর্থন থাকে, তাহলে এ সরকার একটা ম্যান্ডেট নিতে পারে। হ্যাঁ-না ভোটের ব্যবস্থা থাকতে পারে। এতে একটি সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকে। এর মাধ্যমে পরবর্তী সংসদ এটাকে পাস করিয়ে নেবে। এতে কোনো বাধা থাকবে না।
রাষ্ট্রপরিচালনায় জড়িতদের ক্ষমতাচর্চার আচরণ পরিবর্তন না হলে জোড়াতালি দিয়ে সংবিধান সংশোধন করে কোনো সুফল মিলবে না বলেও মনে করেন সিনিয়র আইনজীবীরা।