নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক সভাপতি ও স্হানীয় সরকার বিভাগের সচিব
আবু হেনা মোরশেদ জামানের অপসারণ চেয়ে সম্প্রতি মানববন্ধন করেন প্রতিষ্ঠানটির কতিপয় শিক্ষার্থী। এছাড়া সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক পেজে শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করতে তিনি বক্তব্য দিয়েছেন বলে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কাল্পনিক দাবি করে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন আবু হেনা মোরশেদ জামান।
গণমাধ্যমে পাঠানো একটি বিবৃতিতে সচিবের পক্ষে প্রকৃত তথ্য বিবরণী তুলে ধরা হয়। তাতে বলা হয় গত ২৭ জুলাই ২০২৪ ইস্কাটনস্থ বিয়াম মিলনায়তনে পাবলিক সার্ভিস দিবস উপলক্ষ্যে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ও প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন
সাবেক জননিরাপত্তা সচিব
মোস্তাফিজুর রহমান, ইআরডি সচিব
শাহরিয়ার কাদের। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হুমায়ন কবির, সাবেক রেল সচিব, খায়রুল আলম মজুমদার, অর্থ সচিব ও আবু হেনা মোরশেদ জামান, স্থানীয় সরকার সচিব। এ অনুষ্ঠানে কোন আলোচকই সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন নিয়ে কোন কথা বলেননি বা বাক্য উচ্চারণ করেননি। অথচ, একজন সাবেক অতিরিক্ত সচিব জনাব মাহবুব কবীর মিলন তার নিজস্ব ফেসবুক পেজে শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করতে মূল প্রবন্ধ পাঠকারী প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের আহবান জানান মর্মে উল্লেখ্য করে সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের দিকে ইঙ্গিত করে একটি পোস্ট করেন। বস্তুত, কোন আলোচক এ আন্দোলন দমন নিয়ে কোন বক্তৃতা বা বিবৃতি দেননি। জনাব মোরশেদ জামান ছাত্র আন্দোলন সংক্রান্তে একটি শব্দও উচ্চারণ করেন নি আর তিনি এ অনুষ্ঠানে প্রধা্ন আলোচক বা প্রবন্ধ পাঠকারী ছিলেনও না। বরঞ্চ তিনি সেদিন সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতিমুক্ত থাকার বিষয়ে কঠোর বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেন। সচিব মোরশেদ জামানের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই সন্তান সরাসরি শিক্ষার্থীদের এ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত আছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভীষণ সরবও। এছাড়া, জনাব মোরশেদ জামান নিজেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার-পানি কেনার জন্য অনুদান প্রদান করে তার পূর্ণ সমর্থন সমর্পণ করেন। আসলে জনাব মিলন শুধু নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই এ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পোস্ট করেন। অথচ, এর সপক্ষে কোন প্রমাণ বা ভিডিও ফুটেজ হাজির করতে সক্ষম হননি। এমন কী- তার এ পোস্টের কমেন্টে প্রমাণ বা ভিডিও উপস্থাপন করতে অনুরোধ করলে তিনি কমেন্ট বক্স বন্ধ করে দেন।
বিবৃতিতে বলা হয় সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের মাতা প্রফেসর(অবঃ) দিল আফরোজ বেগম ১৯৭০ সালে সরকারি কলেজে শিক্ষক হিসেবে সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। তিনি ২০০৫ সালে সরকারি মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। আপন কষ্টার্জিত অর্থে তিনি ১৯৮৬-১৯৯৬ পর্যন্ত কিস্তিতে অর্থ জমা প্রদান করে বনশ্রীতে ৩.৫ কাঠা জমি ক্রয় করে রিয়েল এস্টেট কোম্পানি দিয়ে ৫০-৫০ শেয়ারে এ জমিতে বাসস্থান তৈরি করেন। এতে সচিব মহোদয়ের এক টাকারও যোগ নেই। যখন এ জমি ক্রয় করেন তখন মোরশেদ জামান চাকুরিতেও প্রবেশ করেন নি। এ জমি সংক্রান্ত সকল তথ্য তাঁর মায়ের কর নথিতে উল্লেখ্য আছে। জনাব মোরশেদ জামানের দেশের কোথায়ও কোন এক টুকরো জমি আব স্থাবর সম্পত্তি নেই।
পেশাদার এ কর্মকর্তা চাকুরী জীবনের গত ৩২ বছরে সকল কর্মস্থলে সততা, নিষ্ঠা আর সাহসের সাথে কাজ করে জনপ্রশাসনে সমধিক পরিচিতি পান বর্তমান স্থানীয় সরকার সচিব। তিনি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন সিএমএসডিতে করোনাকালে মিঠু সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়ে এবং সরকারের বিপুল অর্থ সাশ্রয় করে এবং তৎকালীন স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেকের সাথে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবত্তীর্ণ হলে সকল মহলে তা প্রশংসিত হয়। এছাড়া, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে কাজ করার সময় তৎকালীন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক-এর বিটিসিএল ৫জি প্রকল্পসহ নানা ক্রয় কাজ, এমএফএস নগদ-এর অনিয়মসহ সংগঠিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে সৎসাহসিকতার প্রমাণ দেন।
ফরিদপুর-এর জেলা প্রশাসক হিসেবে কাজ করার সময় তখনকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন-এর দখলদারিত্ব ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। অবশ্য, ঐ মন্ত্রীর রোষানলে পড়ে তাকে নরসিংদীতে বদলি হতে হয়। তবে, নরসিংদীতে তিনি একজন সৎ ও জনবান্ধব কর্মকর্তা হিসেবে সুনাম কুড়ান। কর্মকালে তিনি নরসিংদী সদরের তখনকার চরম দুর্নীতিবাজ মেয়র ও কর্মকর্তাদের সাথে লড়াই করে তার সততার প্রমাণ দেন।
মোরশেদ জামান যখন ২০১৭ সালে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতির দায়িত্ব নেন, তার আগের বছর প্রতিষ্ঠানটিতে অনিয়মিত ৩০০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। তিনি দায়িত্বের প্রথম বছর কোন অনিয়মিত ভর্তির সুযোগ দেননি। পরের বছরগুলোতে গভর্নিং বডির সদস্যদের অব্যাহত চাপ ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলার যাতে না ভেঙ্গে যায় যে জন্য জিবির সদস্যগণ কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি করান- যা কোনক্রমেই ১০০ এর বেশি নয়। সভাপতি হিসেবে তিনি শুধু ঊর্ধ্বতন সামরিক-অসামরিক কর্মকর্তা, মাননীয় মন্ত্রী, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের এ প্রতিষ্ঠানে অবদান রাখার প্রেক্ষিতে তাদের অনুরোধে/তদবিরে বছরে বড়জোর ৪/৫ টি ভর্তির সুযোগ করে কমিটি অনুমোদন দিলে সচিব মহোদয় সম্মতি দিয়েছেন। তবে, এ সংক্রান্ত সকল প্রমাণ প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত আছে। এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ দিয়ে তিনি বলেন সভাপতির সম্মতিতে এ ৪/৫টি ভর্তির ক্ষেত্রে একটি টাকার লেনদেনও হয়নি; কেউ প্রমাণ দিতেও পারবে না। এভাবে শক্ত হাতে তিনি ভর্তি বাণিজ্য দমন করেন। এ প্রতিষ্ঠানে সচিব মহোদয় দায়িত্বে পালনকালে অবৈধ ভর্তি বন্ধ করার পাশাপাশি নিয়োগ বাণিজ্যও কঠোরভাবে রহিত করেন। তাঁর সময়ে যে কয়েকটি নিয়োগ সম্পন্ন হয় তা ডিআইএ’র প্রতিনিধি ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপালের নেতৃত্বে প্রশ্ন করাসহ একইদিনে উত্তরপত্র দেখে ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগকার্য সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি যখন এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেন তখন এ স্কুলের তহবিলে জমা ছিল ১৩৭ কোটি টাকা। আর তিনি প্রায় ছয় বছর দায়িত্ব শেষে স্কুলের তহবিলে জমা দাঁড়ায় ২৭০ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, এ সময়ে বর্ণিত তহবিলের অর্থে স্কুলের অবকাঠামোগত উন্নতি সাধন করা হয়। তাঁর সভাপতিত্বের এ সময় প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় ফলাফলে সারা দেশে একাধিকবার প্রথম স্থান হবার গৌরব অর্জন করে। তবে, তাঁর শক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত নীতির কারণে এতদিনের লুটেরা ও স্বার্থান্বেষী মহল কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি। এছাড়া তিনি স্কুলে ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন আধুনিক শিক্ষার্থী গড়ার মানসে কিছু সংস্কার আনেন, এতেও কট্টরপন্থী একশ্রেণির শত্রুতে পরিণত হন। এ দুই শ্রেণির বাতিকগ্রস্তরা এখন একত্রিত হয়ে রূপান্তরের এ সময়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে মাঠে নামিয়ে সভাপতির অপসারণ চেয়ে মানববন্ধন করান ও শ্লোগান দেয়ান। অথচ, এ শিক্ষার্থীরা জানেই না সচিব মহোদয় যে গত একবছর এ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নন। তাছাড়া, শিক্ষার্থীদের কেন তাদের মাঠে নামানো হয়েছে তাও তারা নিজেরাই জানেনা যার প্রমাণ সামাজিক মাধ্যমে প্রাপ্ত ভিডিও ফুটেজে মেলে।
তবে সভাপতির দায়িত্বের শেষের দিকে একসময় ডিবেটিং ক্লাবের কয়েকজন সদস্য বিনানুমতিতে কিছু অর্থ তোলে তছরূপ করার দায়ে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ক্লাব ভেঙ্গে দেন। পরে, এ বিষয়ে কয়েকজন সদস্য সভাপতির নিকট প্রতিকার চাইলে তিনি এ বিষয়ে অগ্রসর হওয়ার আগ্রহ বোধ করেননি বিধায় তারা রুষ্ট হয়। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এ অংশটিও এখন অপপ্রচার এর সাথে জড়িত মর্মে জানা যায়।
স্কুলে ডিআইএ-এর প্রতিবেদনে যে ৪০০ কোটি টাকার অনিয়মের কথা বলা হয়েছে, সে অনিয়মের সিংহভাগ হয়েছে সচিব মোরশেদ জামান সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগে। আর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর তাঁর কোন অনিয়মের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না- এটার তার পক্ষ হতে উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জ। যা হয়েছে তা পূর্বের অনিয়মের জের মাত্র। তিনি এ প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনকালে কেউ কোন অনিয়ম বা অভিযোগ উত্থাপন করেনি। অথচ, তিনি সভাপতির দায়িত্ব ছাড়ার এত দিন পর উল্লিখিত স্বার্থান্বেষী মহল দেশের পরিবর্তনের অস্থিতিশীল এ সময়ে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে এমন হীন কাযে লিপ্ত হয়েছে। তবে, সভাপতি থাকার এ সময়ে যদি কোন ধরণের অনিয়মের সংশ্লিষ্টতার সন্দেহের অবকাশ থাকে, তাহলে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি করে তা বের করা আবশ্যক মর্মে তিনি মত দেন। এতে কোন তাঁর দায় প্রমাণিত হলে, তিনি যে কোন শাস্তির মুখোমুখি হতে প্রস্তুত আছেন; আর তাঁর দায় না থাকলে যারা এমন হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাজ করছে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতি আবশ্যক।