নিজস্ব প্রতিবেদক :
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে সোমবার। ৩০০ আসনের বিপরীতে সারা দেশে মনোনয়ন দাখিল করেছে ২ হাজার ৭১৬ জন। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৮৫ প্রার্থীর অর্থাৎ তিন-চতুর্থাংশের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া প্রাথমিক বাছাইয়ে বাতিল গেছে প্রায় এক-চতুর্থাংশ অর্থাৎ ৭৩১ জন প্রার্থীর মনোনয়ন।
মনোনয়ন বাছাইয়ের শেষ দিনে সোমবার ইসি প্রকাশিত তালিকার তথ্য অনুযায়ী, ১০টি অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবৈধ প্রার্থী কুমিল্লা অঞ্চলে। এ অঞ্চলে ২৩টি আসনে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন ৩৫৫ জন। বাছাই শেষে ১২০ জনের মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। আর বৈধ ঘোষণা করেছেন ২৩৫ জনকে। এ ছাড়া প্রার্থিতা সবচেয়ে বেশি বৈধ ঢাকায়। এ অঞ্চলের ১৫টি আসনে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন ৪৩১ জন। বাছাইয়ে ১১৪ জনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। এ অঞ্চলে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ২৩৫ জন। খুলনা অঞ্চলে মনোনয়ন দাখিল করেছেন ৩২২ জন, এর মধ্যে বৈধ ২২৮ জন ও বাতিল ৯৪ জন। বরিশাল অঞ্চলে মনোনয়ন দাখিল করা ১৭৩ জনের মধ্যে বাতিল ৩৮ জন এবং বৈধ ১৩৫ জন। রাজশাহী অঞ্চলে মনোনয়ন দাখিল করেছেন ৩৬৯ জন। তাদের ১১০ জনকে বৈধ ২৫৯ জন অবৈধ ঘোষণা করেছে ইসি। সিলেট অঞ্চলে মনোনয়ন দাখিলকারীর সংখ্যা ১৬০ জন, এর মধ্যে বৈধ ১৩৫ জন, বাতিল ৩৫ জন। ফরিদপুর অঞ্চলে মনোনয়ন দাখিল করা ১০৩ জনের মধ্যে বৈধ ৮০ জন ও বাতিল ২৩ জন। ময়মনসিংহ অঞ্চলে মনোনয়ন দাখিল করেন ৩২৭ জন। তাদের মধ্যে ২৪৩ জনকে বৈধ ও ৮৪ জনকে বাতিল ঘোষণা করা হয়। রংপুর অঞ্চলে মনোনয়ন দাখিলকারী ২৭৮ জনের মধ্যে ৬৯ জনকে বাতিল করে ২০৯ জনকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে মনোনয়ন দাখিল করেন ১৯৮ জন, তাদের মধ্যে বাতিল ৪৪ জন, আর ১৫৪ জনের মনোনয়ন বৈধ।
এদিকে প্রাথমিক বাছাইয়ে ছিটকে পড়লেও এখনও আশা ফুরায়নি অনেক প্রার্থিতা প্রত্যাশীর। রিটার্নিং অফিসারের বাছাইয়ে সংক্ষুব্ধ হওয়া ব্যক্তিরা মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পরবর্তী পাঁচ দিন অর্থাৎ আজ মঙ্গলবার থেকে নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনের আইন শাখার উপ-সচিব মো. আবদুছ সালাম সোমবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাতিল ও গ্রহণাদেশের বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তি বা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিটার্নিং অফিসারের আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পরবর্তী পাঁচ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ৫ ডিসেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপি আকারে (আপিলের মূল কাগজপত্র এক সেট ও ছায়ালিপি ছয় সেটসহ) আপিল দায়ের করতে পারবেন। এ জন্য ১০টি অঞ্চলের জন্য ১০টি বুথ করা হয়েছে নির্বাচন ভবনে। অঞ্চল সংশ্লিষ্ট ১০ কর্মকর্তার কাছে আপিল আবেদন জমা দিতে হবে। তিনি আরও জানান, আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন ১০০ করে আপিল শুনানি হবে ক্রমানুসারে। আপিল আবেদনগুলো শুনানি শেষে ফল মনিটরে প্রদর্শন, রায়ের পিডিএফ কপি ও আপিলের সিদ্ধান্ত রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষের ই-মেইল অ্যাকাউন্টে পাঠানোর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া আপিলের রায়ের অনুলিপি শিডিউল মোতাবেক নির্বাচন ভবনের অভ্যর্থনা ডেস্ক থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। অন্যদিকে রায়ের অনুলিপি আবেদনের ভিত্তিতে বিতরণ করা হবে (উল্লেখ্য নামঞ্জুর আপিলের রায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রদান করা হবে)।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, এবার ২৯টি রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ১ হাজার ৯৬৫ জন এবং স্বতন্ত্র হিসেবে ৭৪৭টি জন। ২৯টি দলের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছে। তবে ৫টি নির্বাচনি এলাকায় (মেহেরপুর-১, জামালপুর-৫, ময়মনসিংহ-৩, মানিকগঞ্জ-২, চট্টগ্রাম-৪) মনোনয়ন দাখিলকারী ব্যক্তি দলীয়ভাবে মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। এ ছাড়া ঝালকাঠি-১ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দুজনকে দলীয় মনোনয়ন দিলেও পরে ৩০ নভেম্বর মুহাম্মদ শাহজাহান ওমরকে দলীয় প্রতীক বরাদ্দের অনুরোধ জানিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে চিঠি দিয়েছে। সবমিলিয়ে ৩০৪টি মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি (জেপি) ২০টি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল ছয়টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৩৪টি, গণতন্ত্রী পার্টি ১২টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ছয়টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি ৩৩টি, বিকল্পধারা ১৪টি, জাতীয় পার্টি ৩০৪টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ৯১টি, জাকের পার্টি ২১৮টি, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন ৪৭টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১৪টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ দুটি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ১৪২টি, গণফোরাম ৯টি, গণফ্রন্ট ২৫টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১৩টি, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ ৩৯টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১৮টি, ইসলামী ঐক্যজোট ৪৫টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৩৭টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ- বিএমএল ৫টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ৭৪টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট- বিএনএফ ৫৫টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস ১১৬টি, তৃণমূল বিএনপি ১৫১টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ৪৯টি এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি দলীয়ভাবে ৮২টি মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপ নামক রাজনৈতিক দলের একটি মনোনয়ন দাখিল হলেও বাস্তবে এ নামের কোনো নিবন্ধন নেই।
এ প্রসঙ্গে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, অনেকেই দলীয় পরিচয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও তারা দলের প্রত্যয়নপত্র জমা দেননি। আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যেও কয়েকটি এমন হয়েছে। অন্য দলেরও আছে। এমন মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় বাতিল হয়ে যাবে। যাদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে তারা আজ (মঙ্গলবার) থেকে আপিল করতে পারবেন, এ বিষয়ে আপিল শুনানি হবে।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই শেষ হয়েছে সোমবার। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।