নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানী ঢাকায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের (জাগৃক) প্রায় ৩ হাজার ৬০০ একর জমি ও প্লট বছরের পর বছর ধরে অবৈধ দখলে রয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা। মিরপুর হাউজিং এস্টেটের ৭টি মৌজায় এবং ৯ নম্বর সেকশনে অধিগ্রহণ করা ৭৭৭ একর জমি অবৈধ দখলে রয়েছে প্রায় ৪০ বছর ধরে। এ জমিতে দখলবাজদের মার্কেট ও বহুতল ভবন নির্মাণের সুযোগও করে দিয়েছে জাগৃকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মার্কেট ও টিনশেড ঘর থেকে প্রতি মাসে আদায় করা হয় কোটি কোটি টাকা। এ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও এলাকার প্রভাবশালীরা। এ কারণে সরকারের মূল্যবান এ সম্পদ উদ্ধারে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায় না।
এ ছাড়া প্লট বরাদ্দে অনিয়ম, একই সেকশনের একই মাপের প্লট সুবিধার বিনিময়ে কম মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। অন্যদিকে চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করলেও ঠিকাদারকে ১৭ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করেছে সংস্থাটি। আর বিল পরিশোধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আয়কর, ভ্যাট ও জামানত বাবদ ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা কর্তন দেখানো হলেও সংশ্লিষ্ট খাতে জমা না করে ব্যাংক থেকে উত্তোলনের মাধ্যমে তা আত্মসাৎ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
নামমাত্র মূল্যে ফ্ল্যাট ভাড়া দিলেও ১১ কোটি টাকা ভাড়া অনাদায়ী রয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দ-ব্যয় ও সংশ্লিষ্ট হিসাব সংক্রান্ত কমপ্লায়েন্স নিরীক্ষা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে এসব অনিয়মের চিত্র।
কী পরিমাণ জমি অবৈধ দখলে রয়েছে তার কোনো তথ্যও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে নেই বলে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ঢাকা বিভাগ-১-এর আওতায় মিরপুর হাউজিং এস্টেটের মিরপুর সেকশন-১, ২, ৩, ৫, ৬, ৭, ৯ ১১ ও ১২ এবং রূপনগর সম্প্রসারণ ২য় পর্ব ও বাস্তুহারা কোর হাউজে মোট ৩ হাজার ৬১৫ একর জমিতে ৪ হাজার ৬১৯টি আবাসিক প্লট, ২২৬টি বাণিজ্যিক প্লট, ১২৬টি প্রাতিষ্ঠানিক প্লট, ৩১৮টি শিল্প প্লট, ২৪৮০টি পুনর্বাসন প্লট, ৬৮৪০টি নির্মিত আধাপাকা টিনশেড বাড়ি, ১৪১টি অনির্মিত আধাপাকা টিনশেড বাড়ি ও ৬৮৫৬টি নিউক্লিয়াস বাড়ি রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে শুধু ৪৭৪টি আবাসিক প্লটের (৯৭৬ কাঠা) তালিকা বা হিসাব দিতে পেরেছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। বাকি প্রায় ২ লাখ ১৭ হাজার ৭৭১ কাঠা (১০ হাজার ৮৮৯ বিঘা) জমির কোনো ধরনের বরাদ্দ, বণ্টন, বিক্রির তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি এগুলো কর্তৃপক্ষের দখলে থাকারও কোনো প্রমাণ পায়নি সিএজি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত হারে গ্রাউন্ড চার্জ অর্থাৎ কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ভূমি কর আদায় করা হয়। কিন্তু এসব প্লট ও বাড়ির গ্রাউন্ড চার্জ আদায় রেজিস্টার বিবরণী পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ দেওয়া না হয়ে থাকলে কর্তৃপক্ষের দখলে থাকার কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মিরপুর হাউজিং এস্টেটের ৭টি মৌজায় এবং ৯ নং সেকশনের অধিগ্রহণ করা ৭৭৭ একর জমির ইনভেন্টরি না করা এবং অবৈধ দখল হওয়ায় কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত মূল্যে ১১ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকার জমি বেদখল রয়েছে। জমি অধিগ্রহণ ও প্লট সংক্রান্ত নথি ও গেজেটভুক্ত জমির বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায়, মিরপুর হাউজিং এস্টেটের ৭টি মৌজায় ১৯৬০ থেকে ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করা ৬০৯ একর জমি ১৯৭০ সালে গেজেটভুক্ত হয়। এ ছাড়া সংস্থাটির এক বোর্ডসভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায়, মিরপুর ৯ নং সেকশনে ১১,২৬৪টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ১৯৮১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অনুকূলে গেজেটভুক্ত ও অ্যালাইনমেন্টভুক্ত ১৬৮ একর জমি হস্তান্তর করা হয়। ওই জমি অবৈধ দখলদাররা দখল করেছে। ১৯৮১ সালে জমি বুঝে পেলেও দীর্ঘ ৪০ বছরেও জমি দখলমুক্ত করা হয়নি। ফলে মোট ৭৭৭ একর জমি কর্তৃপক্ষের দখলে না থাকলেও এগুলো উদ্ধারে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি।
মিরপুর-১ নং সেকশনে (সনি সিনেমা হলের বিপরীতে দক্ষিণ দিকে) কর্তৃপক্ষের জমিতে অবৈধভাবে স্বাধীন বাংলা সুপার মার্কেটসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করার সুযোগ দেওয়ায় কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ১১৫ কোটি ঢাকার জমি বেদখল রয়েছে।
এ ছাড়া জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অধীন নির্বাহী প্রকৌশলী, ঢাকা বিভাগ-২-এর ভূমিকর পরিশোধ সংক্রান্ত নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, টঙ্গীর দত্তপাড়া মৌজায় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বাংলা ১৪২৬ সনে ভূমি অফিসে কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন ৯৮ একর জমির ভূমি করবাবদ ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৮০ টাকা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ ১৯৯০ সালে রাজউকের কাছ থেকে ওই জমি বুঝে নিলেও জমির কোনো ইনভেন্টরি করা হয়নি এবং অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়নি। ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিভাগ-২-এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী, হিসাবরক্ষক এবং নিরীক্ষা দলের দলনেতাসহ দত্তপাড়া মৌজার জমি বাস্তবে যাচাই করা হয়। এতে দেখা যায়, ওই জমির মধ্যে ১,০২০টি সেমিপাকা টিনশেড ঘর, প্রায় তিন শতাধিক অবৈধ দোকানঘর, বহুসংখ্যক অবৈধ ইমারত নির্মাণ করা হয়েছে এবং কিছু অবৈধ বহুতল ইমারতের নির্মাণকাজ চলছে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে বাধা দেওয়া বা উচ্ছেদের বিষয়ে কোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে সরকারের ১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকার সম্পত্তি ১৯৯০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বেদখল হয়ে আছে এবং এই জমিতে প্রায় তিন শতাধিক অবৈধ দোকান, বিপুলসংখ্যক অবৈধ বাড়ি এবং ১,০২০টি সেমিপাকা টিনশেড ঘর থাকলেও কোনো ভাড়া বা রাজস্ব কখনোই আদায় করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভাড়া আদায় করে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেন।
অন্যদিকে ২০১৯ সালে ঢাকার মিরপুরের ৫নং সেকশনে ৬টি প্লট ও বাড়ি বরাদ্দ সংক্রান্ত নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, একই স্থানে জনৈক মো. আবুল বশর চৌধুরীর কাছে যে মাপের প্লট ও বাড়ি ৩৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৮৪ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে (বাড়ি নং ৩৩৫); পক্ষান্তরে প্রায় একই সময়ে একই মাপের ৫টি প্লট ও বাড়ি (বাড়ি নং ৪৩, ১৬০, ৩৩, ৯৫ ও ২২৫) বিক্রি করা হয়েছে ১০ লাখ ৫৪ হাজার ৩২০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে। এ হিসাবে প্রতিটি প্লট ও বাড়ির মূল্য ২৫ লাখ ৭ হাজার টাকা কম নির্ধারণ ও আদায় করা হয়েছে। নিরীক্ষা বিভাগ বলছে, একই সেকশনের একই মৌজায় নির্দিষ্ট মাপের প্লটের মূল্য ভিন্ন ভিন্ন নির্ধারণ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
এ ছাড়া মিরপুর সেকশন-৪ রূপনগর আবাসিক এলাকায় সড়ক নং-৪ এর বাড়ি নং ১১ ও বাড়ি নং-১০-এর মাঝে নকশা অনুযায়ী রাস্তা রয়েছে এবং এ রাস্তার সঙ্গে খেলার মাঠের সংযোগ রয়েছে। কিন্তু এ দুটি বাড়ির মাঝের সরকারি রাস্তা দখল করে একটি ইমারত নির্মাণ করা হয়েছে। ন্যূনতম রাস্তার ৪ কাঠা জমি অবৈধভাবে দখল করে ইমারত নির্মাণ করার সুযোগ করে দিয়েছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। একইভাবে মিরপুর ৪ নং সেকশনে ৪৭ বছর আগে অধিগ্রহণ করা ২০ একর জমির ইনভেন্টরি না করা এবং দখলে না রাখায় কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত মূল্যে ৩৬৩ কোটি টাকার জমি বেদখল রয়েছে। এ জমিতে প্রায় ৩ হাজার ঘর রয়েছে এবং প্রতিটি ঘর থেকে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয় অর্থাৎ প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ কোটি টাকা চাঁদা আদায় হচ্ছে। কিন্তু জমি অবৈধ দখলে থাকায় সরকার বা কর্তৃপক্ষের কোষাগারে এ টাকা জমা হওয়ার সুযোগ নেই।
অন্যদিকে মোহাম্মদপুর হাউজিং এস্টেটের ডি-টাইপ ৮টি বিল্ডিংয়ে মোট ২৮৮টি বাসা এবং অন্য ১১টি ভবনের ২৭৬টি বাসা বিভিন্ন শ্রেণির লোকের কাছে খুব স্বল্পমূল্যে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ভাড়া আদায় বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯৭৮ সাল থেকে অনেক বাসা অবৈধ দখলে রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বরাদ্দকারী বরাদ্দপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে অন্য বসবাসকারীর কাছে বাসা হস্তান্তর বা ভাড়া দিয়েছে। ফলে মিরপুর হাউজিং এস্টেটের ১৪ নং সেকশনে ৫৭৬টি বাসার ভাড়া অনাদায়ী রয়েছে ১১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। একই লোকের দখলে একাধিক বাসাও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ডি-টাইপ বিল্ডিংয়ের ১৭, ১৮ ও ২০ নম্বর বাসা জনৈক মো. হামিদুল হকের দখলে রয়েছে এবং তিনি ভাড়াও দেননি। বরাদ্দপত্রের শর্ত মোতাবেক পরিবারসহ বসবাস করতে পারবেন; তবে ভাড়া দিতে পারবেন না। কিন্তু অধিকাংশ বরাদ্দ গ্রহীতা অন্য লোককে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। অনুরূপভাবে একই ব্যক্তিকে একাধিক বাসা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দের শর্তানুযায়ী ৬ মাস ভাড়া বকেয়া থাকলেই বরাদ্দ বাতিল হবে। কিন্তু ২০ বছর ভাড়া বকেয়া হলেও বরাদ্দ বাতিল করা হয়নি।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০০০ অনুযায়ী সরকারি সংস্থার সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ ও অবৈধ দখলমুক্ত করতে হবে এবং সরকারি জমির হালনাগাদ ইনভেন্টরি করতে হবে। কিন্তু অবৈধ দখলে থাকা জমি কী কাজে ব্যবহার হচ্ছে অথবা বরাদ্দ বা হস্তান্তর করা হয়েছে কি না এ ধরনের কোনো রেকর্ড রাখা হয়নি এবং জমির হালনাগাদ ইনভেন্টরি করা হয়নি। সর্বশেষ সিটি জরিপেও এ জমি কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ড করার প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত কিছু লোককে অবৈধ সুবিধা দেওয়ার জন্য এবং কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণেই সরকারি এ বিপুল সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মিরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বিল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জয়নগর আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের ২ নং ভবন এবং ১০০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের ভবন নির্মাণ করার জন্য মেসার্স প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। কিন্তু ওই ঠিকাদার চুক্তি মোতাবেক যথাসময়ে কাজ না করায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ চুক্তি বাতিল করে। চুক্তি বাতিলের পর ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সম্পাদিত ও অসম্পাদিত কাজের চূড়ান্ত পরিমাপ ও হিসাব নির্ধারণ করা হয়। ওই প্রকল্পের ক্যাশবুক ও ব্যাংক বিবরণী থেকে দেখা যায়, ওই ঠিকাদার কোনো ধরনের বিল দাখিল করেনি ও কাজ সম্পাদনের পক্ষে কোনো মেজারমেন্ট বুক (এমবি) সংরক্ষণ করা হয়নি। অথচ কাজ সম্পাদন ব্যতীত নির্বাহী প্রকৌশলীর একক স্বাক্ষরে হিসাবরক্ষকের স্বাক্ষর ছাড়াই চেকের মাধ্যমে ঠিকাদারকে ১৭ কোটি ১৯ লাখ ৬৯ হাজার ২৭৭ টাকা দেওয়া হয়েছে। বিল পরিশোধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আয়কর, ভ্যাট ও জামানত বাবদ ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা কর্তন দেখানো হলেও সংশ্লিষ্ট খাতে জমা না করে ব্যাংক থেকে উত্তোলনের মাধ্যমে এ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ফলে কাজ না করেই সরকারের ২১ কোটি ২৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণকাজ সম্পাদন না করায় কাজ বাতিল করা হলেও চুক্তির শর্ত মোতাবেক অবশিষ্ট কাজের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় না করায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া বাতিল করা কাজের জন্য আরোপিত লিকুইডেটেড ড্যামেজেস ও অতিরিক্ত খরচের টাকা আদায় না করায় ক্ষতি হয়েছে ২৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান না হওয়ার কারণেই জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বিপুল সম্পত্তি যুগ যুগ ধরে বেদখল হয়েছে। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারী পর্যন্ত অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। অবৈধ দখলে থাকা জমি ও প্লটে ঘর তুলে কোটি কোটি টাকা ভাড়া আদায় করে তারা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেন। এ কারণে জমি উদ্ধারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। তবে বেদখল হওয়া সম্পত্তি উদ্ধারে মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন। তিনি বলেন, জনগণের সম্পত্তি কীভাবে উদ্ধার করা যায়, সে চেষ্টা শুরু করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) মো. আহসান হাবিব সময়ের আলোকে বলেন, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলীদের কাছ থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের যেসব প্রস্তাব পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। পর্যায়ক্রমে সব দখলদারকেই উচ্ছেদ করা হবে। তালিকা তৈরি করে বকেয়া বাসা ভাড়া আদায়ের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সুত্র: দৈনিক সময়ের আলো।