সামনে জাতীয় নির্বাচন। সামনে বিএনপির আন্দোলন। তাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই রমজান মাসকে গণসংযোগের মাস হিসেবে বেছে নিয়েছে। রমজানজুড়ে হবে ইফতার আয়োজন, ইফতার পার্টি।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয়ভাবে দুই দলই ঢাকায় ইফতার পার্টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড মহল্লায় এবার আগের চেয়ে দলীয়ভাবে বেশি ইফতার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়েও আয়োজন বাড়াতে বলা হয়েছে।
বিএনপি রোজার মাসে এখনও কোনো আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়নি। দায়িত্বশীল একজন নেতা বলেন, ‘সাধারণত রোজার মাসে আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়ার রেওয়াজ নেই বাংলাদেশে। তারপরও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। আমরা দ্রব্যমূল্যকে বিবেচনায় রাখছি। সেরকম কিছু হলে রোজায় দ্রব্যমূল্য নিয়ে আমরা কর্মসূচি দেব। তবে এবার ঢাকাসহ সারাদেশে বেশি করে ইফতার পর্টির আয়োজন করা হবে।’
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘দুই উদ্দেশ্যে ইফতার পার্টিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রথমত, এর মাধ্যমে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চাঙা ও সমবেত করা। আর সাধারণ মানুষ যারা ইফতারে আসবেন, তাদেরও আন্দোলনের বার্তা দেওয়া। দ্রব্যমূল্য নিয়ে তো ইফতারে কথা হবে। আন্দোলনের বার্তা দেওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট।’
এই সময়ে বিএনপি গরিব মানুষের পাশেও দাঁড়াতে চায়। তাই ঈদ পর্যন্ত তাদের এভাবে আন্দোলনের গণসংযোগ চলবে। ঈদের পর বিএনপি তার সমমনা দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন আরও শক্ত করতে চায়। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে তার আগেই একটা কিছু করতে চায় দলটি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন বলেন, ‘এবার রোজার মাসকে আমরা ঈদের পর অলআউট আন্দোলনের প্রস্তুতির মাস হিসেবে নিয়েছি। তাই ঢাকাসহ সারাদেশে নেতাকর্মীদের বেশি করে ইফতার পার্টির আয়োজন করার জন্য বলা হয়েছে। এর ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রম যেমন বাড়বে তেমনি আমরা পরবর্তী আন্দোলনের মেসেজও দিতে পারব।’
খায়রুল কবীর খোকন বলেন, ‘রোজায় এবং ঈদে নেতাকর্মীদের যার যার এলাকায় থেকে সাধ্যমতো মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। কারণ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ এখন খুবই খারাপ অবস্থায় আছে।’
খোকন আরও বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা অংশ নেব না। আমরা নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় করতে ঈদের পর সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করব। তাই রমজান নেতাকর্মীদের আরও সংগঠিত করা এবং সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের ব্যর্থতা ও দুর্নীতির মেসেজ পৌঁছে দেওয়ার মাস।’
আওয়ামী লীগ এবার রমজানে দলীয় ও সরকারিভাবে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে এক কোটি মানুষকে টিসিবির পণ্য দেওয়া হচ্ছে। সরকারের অন্যান্য খাদ্য ও ভাতা কর্মসূচি চালু আছে। রমজানে দ্রব্যমূল্য মনিটরিং করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
একজন শীর্ষ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘ডিসেম্বরে নির্বাচন, আবার বিএনপির আন্দোলনও আছে সামনে। এই দুইটি বিষয়কে বিবেচনায় রেখে এবার রমজান মাসকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। রোজায় দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের মধ্যে যাতে নতুন করে ক্ষোভ তৈরি না হয়, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সরকারের বাইরেও দলীয় নেতাকর্মীদের এ নিয়ে খোঁজ-খবর রাখতে বলা হয়েছে। আর এর সঙ্গে ঢাকা থেকে শুরু করে সারাদেশের পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত ইফতার পার্টির আয়োজন করতে বলা হয়েছে।’
জানা গেছে, রোজা ও ঈদের পরে আওয়ামী লীগ পুরোপুরি নির্বাচনের কাজে নেমে যেতে চায়। তাই রমজান মাসকে তারা প্রস্তুতির মাস হিসেবে নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব সময়ই রোজায়-ঈদে সাধারণ মানুষের পাশে থাকেন। তবে এবার এটা আরও অনেক বেশি হবে। কারণ ডিসেম্বরে নির্বাচন এবং সামনে বিএনপি কঠোর আন্দোলনের কথাও বলছে। তাই আমরা এবার শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশের ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ইফতার পার্টি করব। ইতোমধ্যে সারাদেশে সেটা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার ইফতার পার্টি আগের চেয়ে কমপক্ষে দ্বিগুণ হবে।’
এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘ঢাকায় যেসব নেতা, এমপি, মন্ত্রী আছেন, তারা এবার রোজায় প্রধানত তাদের এলাকাতেই থাকবেন। অনেকেই নির্বাচনী এলাকায় চলে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শুধু ইফতার পার্টি নয়, নেতাকর্মীদের রোজা ও ঈদে মানুষের পাশে থাকতে বলেছেন।’
কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা জানি বিএনপিও রোজায় ইফতারসহ নানান কর্মসূচি পালন করবে। কোনো অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য যাতে ছাড়াতে না পারে, সেদিকে আমাদের নেতাকর্মীদের সতর্ক নজর থাকবে।’
আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘ঈদের পর আমাদের নির্বাচনের কাজ পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে। আমরা রোজার মধ্যে সাংগঠনিক কাজ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু রোজায় সেটা নেতাকর্মীদের জন্য কষ্টকর হবে। তাই ইফতার আয়োজনের ওপর জোর দিয়েছি।’
এদিকে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলও এবার সার্বিক দিক বিবেচনা করে রোজাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। তারাও ইফতার পার্টিতে জোর দিয়েছে। বিশেষ করে ইসলামি দলগুলোর প্রস্তুতি সবচেয়ে বেশি। আর রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাড়াও পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে রোজায় ইফতার পার্টির ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় সরকারি দল আওয়ামী লীগের নানান পর্যায়ের ইফতার পার্টিতে মন্ত্রী-এমপিদের শিডিউল পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। কারণ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেরও অনেক ইফতার আয়োজন আছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদেরও একই অবস্থা। তারাও শিডিউল দিতে পারছেন না সবাইকে।