যুগপৎ আন্দোলন অংশ হিসেবে আগামী শনিবার দেশের সব জেলায় পদযাত্রা কর্মসুচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে ১২ দলীয় জোট। পদযাত্রা পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে নতুন এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার।
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় পদযাত্রা পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে পরিচালনা করেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা।সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেম সেলিম, এনডিপির মহাসচিব আব্দুল্লাহ আর হারুন সোহেল, জাগপার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, ন্যাপ ভাষানী চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্য জোটের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আমিন, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব নুরুল কবীর পিন্টু, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন প্রমুখ।
সমাবেশে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, প্রশাসন ও পুলিশবাহিনী দেশের উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সভা/সমাবেশ, মিছিল মিটিং করতে দিচ্ছে না। এ অবস্থায় দেশে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না । এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দল মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারের পতনের জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ আবারও নতুন করে বিদ্রোহে জেগে উঠেছে। সারাদেশ আজকে অগ্নিগর্ভা। এই দেশের মানুষ অতীতে কোন স্বেরাচার শাসকে মেনে নেয়নি। আগামী দিনেও মেনে নেবে না। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠালেও সরকার এবার আর পার পাবে না। দেশের প্রতিটি মানুষ, রাজনৈতিক দল আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এই স্বেরাচার সরকার হটাতে।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ইরান বলেন, এই সরকারের ভোট চুরির বিরুদ্ধে, গুম খুন নির্যাতন দুবৃত্তায়নের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ আজকে রাস্তায় নেমেছে। দুইদিন আগে ভারতের পরাষ্ট্র সচিব বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি তাদের পূর্ণ আস্থা আছে। ভারতের মোদি সরকার শেখ হাসিনার প্রতি সর্মথন দেবেন তাতে মোটেও আশ্চর্য হয়নি। আমরা ভারত বিরোধী নয়, তবে ভারত গণতন্ত্রকামী মানুষ বাংলাদেশের গনতন্ত্রকামী মানুষের প্রতিও তাদের সর্মথন রয়েছে। এটা বিজেপি সরকারের বক্তব্য, ভারতের জনগণের বক্তব্য নয়। আজকে আমেরিকা ইউরোপ সহ যারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে তাদেরকে স্বাগতম জানায়।
তিনি বলেন, এদেশের মানুষ শান্তিপুণ ভাবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন করছে। দেশের ১৮ কোটি মানুষ ভোট দিতে চায়। তারা দিনের বেলায় ভোট দিয়ে তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চায়। জাতিসংঘের অধীনে হলেও অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
এনডিপির মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, সরকার পতনের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে হবে। কারন এই সরকার দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, হিরো আলমের সাথে শেখ হাসিনা বগুড়া থেকে নির্বাচন করলে হেরে যাবে। ওবায়দুল কাদেরও হিরো আলমের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে ভয় পেয়েছে।
এলডিপি মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি ভারতের আস্তা থাকলেও দেশের মানুষের নেই। এই সরকার আজকে হিরো আলমের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করতে ভয় পায়। এটা সরকারের দেউলিয়া প্রমাণ। আগামী সংসদ নির্বাচন হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।
সমাবেশ বক্তারা বলেন, শেখ হাসিনা সরকার ভোট চোর। তাদেরকে গদি থেকে নামতে হবে। তাহলে দেশের মুক্তি মিলবে। এই সরকারের বন্দিশালা থেকে খালেদা জিয়া সহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তি দাবি করছি। আগামী দিনে সরকার পতনের আন্দোলন সংগ্রামে দেশবাসীকে অংশগ্রহণের আহবান জানান।
বক্তারা আরো বলেন, বিদ্যুৎ গ্যাস চাল ডাল তেল আটাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি দেশের সাধারণ মানুষকে দিশেহারা করে তুলেছে! ভোটারবিহীন সরকার বিদেশি ঋণের টাকায় মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন দেখিয়ে ক্ষুধার্ত জনগণকে উন্নয়নের নামে উপহাস করছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জালিয়াতির নির্বাচন করে ক্ষমতা দখলকারী সরকারের অধীনে এই দেশে আর কোনো জালিয়াতির নির্বাচন করতে দেয়া হবে না।
পরে বিজয়নগর পানির ট্যাংকি সামনে থেকে শুরু হয়ে আজাদ প্রোডাক্টসের গলি হয়ে কালভার্ট রোড হয়ে আবার বিজয়নগরে এসে শেষ হয়। ব্যানার, প্লে-কার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেন তারা। আওয়ামী সন্ত্রাস সরকারের দমন-পীড়ন, গণগ্রেফতার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে এবং বিদ্যুৎ গ্যাস ও জ্বালানি সহ সকল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম কমানো সহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে এই পদযাত্রা আয়োজন করে ১২ দলীয় জোট।