সুইস বাধা ডিঙিয়ে শেষ ষোলোয় ব্রাজিল

1180
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

অবশেষে ব্রাজিল ডিঙাল সুইস বাধা। বিশ্বকাপে এবারের আগে আরও দুবার মুখোমুখি হলেও একবারও সুইজারল্যান্ডকে হারাতে পারেনি পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। কিন্তু দানে দানে তৃতীয়বারে এসে সুইসদের হারাল সাম্বার দেশ। ক্যাসেমিরোর একমাত্র গোলে সুইস বাধা ডিঙিয়ে ফ্রান্সের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ ষোলো নিশ্চিত করল ব্রাজিল।

স্টেডিয়াম -৯৭৪ এ সোমবার (২৮ নভেম্বর) সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যাসেমিরোর একমাত্র গোলে সুইজারল্যান্ডকে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো হারিয়েছে ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধের ৮৩ মিনিটে গোলটি করেন এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার।

সুইসদের বিপক্ষে এ ম্যাচে নেইমারের অভাবটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ব্রাজিল। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা সুইসদের বিপক্ষে প্রাধান্য বিস্তার করে খেললেও ৮৩ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে গোলের জন্য।

এদিন ব্রাজিল খেলতে নামে দুটি পরিবর্তন নিয়ে। ইনজুরিতে ছিটকে যাওয়া নেইমার ও দানিলোর জায়গায় ফ্রেড ও এডার মিলিতাকে নিয়ে নামে ব্রাজিল। আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে ভরা প্রথমার্ধে গোল করতে পারেনি কোনো পক্ষই।

সেরা তারকা নেইমারের অনুপস্থিতিতে কোচ তিতে সুইসদের বিপক্ষে শুরু করে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে। সুইসদের বিপক্ষে একাদশে ফেরেন ফ্রেড। ক্যাসেমিরো ও লুকাস পাকুয়েতার সঙ্গে মধ্যমাঠ সামলান তিনি।

৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলতে নামা ব্রাজিল শুরুর ১০ মিনিট খেলছে অগোছালো ফুটবল। তবে ধীরে ধীরে নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে আক্রমণ করতে থাকে রিচার্লিসন-রাফিনিয়ারা। ম্যাচের শুরুতেই ফ্রি কিক পায় ব্রাজিল। ডি বক্সে দারুণ ক্রস পেলেও জায়গামতো কেউ না থাকায় বলে পা লাগাতে পারেনি কেউই।

১৮ মিনিটে দারুণ সুযোগ পায় ব্রাজিল। বাঁ প্রান্ত থেকে পাকুয়েতা বল ফেলেন ডি বক্সে। রিচার্লিসন পা লাগালেও ক্লিয়ার করে সুইস ডিফেন্ডার।

২৫ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে ব্রাজিলের ডিবক্সে ঢুকে পড়ে সুইজারল্যান্ড। তবে রক্ষণভাগের দৃঢ়তায় বিপদমুক্ত হয় ব্রাজিল। ২৬ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে দারুণ ক্রস করেন রাফিনিয়া। কিন্তু গোলরক্ষকে একা পেয়েও গায়ে বল মারেন ভিনিসিউস। ৩০ মিনিটে দূরপাল্লার শটে গোলরক্ষকের পরীক্ষা নেন রাফিনিয়া।

প্রথমার্ধের শেষের দিকে একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকে রাফিনিয়া-ভিনিসিউসরা। কিন্তু সুইস গোলরক্ষক ও ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় গোলের দেখা পায়নি ব্রাজিল।

এই ম্যাচের প্রথমার্ধে ব্রাজিলের গোল লক্ষ্য করে মাত্র একটি শট নিতে পেরেছে সুইজারল্যান্ড। যা ২০১০ সালে স্পেনের বিপক্ষে ম্যাচের পর বিশ্বকাপ ম্যাচে তাদের সর্বনিম্ন।

দ্বিতীয়ার্ধের ৫১ মিনিটে অল্পের জন্য গোলবঞ্চিত হয় সুইজারল্যান্ড। ডানপ্রান্ত দিয়ে ডিবক্সে বিপজ্জনক বল ফেলেন সুইজারল্যান্ডের এক খেলোয়াড়। গোললাইনের ঠিক সামনে থেকে বল ক্লিয়ার করেন থিয়াগো সিলভা।

৫৬ মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ মিস করেন রিচার্লিসন। বাঁ প্রান্ত থেকে ভিনিসিউসের দুর্দান্ত ক্রসে পা লাগালেই আসরে তৃতীয় গোল পেতে পারতেন তিনি। পা লাগাতেই পারেননি এই স্ট্রাইকার। ৫৮ মিনিটে ফ্রেডকে তুলে ব্রুনো গুইমিরেসকে নামান তিতে। দুটো পরিবর্তন করেন সুইজারল্যান্ডের কোচও।

পরিবর্তন করে খেলতে নেমে টানা দুই মিনিট ব্রাজিলের রক্ষণের ওপর ঝড় বইয়ে দেয় সুইজারল্যান্ড। তবে তাদের আক্রমণগুলো প্রতিহত হয় ব্রাজিলের রক্ষণদূর্গে।

৬৮ মিনিটে নিজেদের অর্ধে বল পেয়ে কাউন্টার অ্যাটাক ওঠে ব্রাজিল। দারুণ এক গোল করে উল্লাসে মাতেন ভিনিসিউস জুনিয়র। কিন্তু ভিএআর চেক করে অফসাইডের কারণে গোলটি বাতিল করেন রেফারি।

৭২ মিনিটে রিচার্লিসনকে তুলে গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে নামান তিতে। ম্যাচের শেষ দিকে এসে দুদলই সাবধানী ফুটবল খেলতে থাকে। রক্ষণ সামলে আক্রমণে যায় দুদলই। ৮০ মিনিটে ফ্রিকিক পায় ব্রাজিল। তবে রক্ষণদেয়ালে লেগে ফিরে আসে বল। ফিরতি বলে হেড করলেও সরাসরি তা চলে যায় ইয়ান সোমারের হাতে।

একের পর এক আক্রমণ করেও ব্যর্থ ব্রাজিল যখন সুইসদের বিপক্ষে আরেকবার ড্রয়ের শঙ্কায় তখনই নায়ক হতে দৃশ্যপটে ক্যাসেমিরো। ৮৩ মিনিটে ভিনিসিউসের ইনসাইড পাসে ফ্লিক করেন রদ্রিগো। বল একবার ড্রপ খেয়ে চলে আসে ক্যাসেমিরোর সামনে। হাফ ভলিতে বল জালে জড়িয়ে দিয়ে ব্রাজিলকে উল্লাসে মাতান তিনি। তার এই গোলেই সুইসদের বিপক্ষে বিশ্বকাপে ব্রাজিলের গোলখরা কাটল।

গোল খেয়ে শোধ করতে বেশ কিছু আক্রমণ তৈরি করেছিল সুইজারল্যান্ড। তবে ব্রাজিলিয়ান রক্ষণভাগের দৃঢ়তায় গোল পাওয়া হয়নি তাদের। কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিলের গোলে এখন পর্যন্ত কোনো শট রাখতে পারেনি প্রতিপক্ষ দল। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে এমন নৈপুণ্য দেখিয়েছে কোনো দল।

এই জয়ে দুই ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ টেবিলের শীর্ষে আছে ব্রাজিল। সেই সঙ্গে নিশ্চিত হয়েছে তাদের নকআউট পর্বও। ফ্রান্সের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে কাতার বিশ্বকাপের শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে তিতের দল।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন