বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রক্ষক এখন ভক্ষক। তাই সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার হচ্ছে বাই দ্য বিজনেসম্যান, ফর দ্য বিজনেসম্যান,অব দ্য বিজনেস ম্যান।
বুধবার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল মনে করেন, সরকার ধাপে ধাপে তেলের দাম বাড়াতে পারতো। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমায় জ্বালানির দর বাড়িয়েছে সরকার। দুর্নীতি, অযোগ্যতাসহ নানা কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, চালসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর। সব কিছুর দাম বেড়েছে ৭০ থেকে ১০০ শতাংশ। বাস ভাড়া বেড়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আন্দোলন বলতে হরতাল, অবরোধ নয়, জনগণকে রাজপথে নামানাটোও আন্দোলনের অংশ। আমরা সেটিই করছি। সরকারের অব্যবস্থাপনা ও সিন্ডিকেশনের যাঁতাকলে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।
বর্তমানে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চিত্র আমরা সবাই জানি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে আমরা যারা উপস্থিত আছি, সাংবাদিকরাসহ আমাদের সবারই বলতে গেলে নির্দিষ্ট টাকায় সংসার চালাতে হয়। তাই আমরা যতটা তিক্তভাবে বাজারের মূল্যবৃদ্ধি অনুভব করতে পারি, তা জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে যারা সম্পদের পাহাড় জমিয়েছে, যাদের দুর্নীতির টাকা এখন সুইস ব্যাংক, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম, কানাডার বেগমপাড়া, ইউরোপ, আমেরিকা কিংবা লাতিন আমেরিকান দ্বীপরাষ্ট্রে পাচার হচ্ছে, তারা কখনই অনুভব করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে সরকারের মননশূন্য সিন্ডিকেটকারীদের ভূমিকার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। মূল্যবৃদ্ধির এ দুর্নীতিবাজ চক্রের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে সরকারে তালিকাশক্তিরাই।
বর্তমান সরকার মূলত চালাচ্ছেই এক ধরনের স্বার্থান্বেষী অর্থপিপাসু বণিক সমাজ জানিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, সন্নিধায় ভূত থাকলে তাড়াবে কে? রক্ষক যদি ভক্ষক হয়, তখন যা হওয়ার; তাই হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশে। এবারের বাজেটের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। এ সরকার হলো বাই দ্য বিজনেসম্যান, ফর দ্য বিজনেসম্যান,অব দ্য বিজনেসম্যান।
মির্জা ফখরুল বলেন, এর ফলে স্বার্থের সংঘাত দেখা দিলে ব্যবসায়ীদের স্বার্থই বরাবর প্রাধান্য পাচ্ছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। যার নেতিবাচক প্রভাবে এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল ও ভোগ্যপণ্যসহ সব পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় ভোক্তারা যখন দিশেহারা, তখন হঠাৎ করে বিনা নোটিশে রাতের অন্ধকারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে সাধারণ ভোক্তাদের ওপর।
তিনি বলেন, এ মূল্যবৃদ্ধি বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি। জ্বালানির এত দাম বৃদ্ধি এর আগে আর কখনও হয়নি। ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও কেরোসিনের দাম একবারে ৪৫% থেকে ৫১% একসঙ্গে বাড়িয়েছে তারা। এতে দেশের মুখ থুবড়ে পড়া অর্থনীতির কফিনে শেষ পেরেকটুকু ঠুকে দেয়া হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে সর্বক্ষেত্রে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সীমিত আয়ের মানুষেরা দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষেও টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। এতে জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গণপরিবহন থেকে কাঁচাবাজার- সর্বক্ষেত্রে কয়েকজন মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবাদে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে। এরা মিছিল করছে।
জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সারাদেশে আগুন জ্বলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জ্বালানির মূল্য যদি বাড়াতেই হতো সরকার তা সহনীয়ভাবে ধাপে ধাপে বাড়াতে পারতো। হঠাৎ করে রাতের আঁধারে একবারে এত বেশি দাম বৃদ্ধিতে জ্বালানি ব্যবহার সংশ্লিষ্ট সবাই হকচকিত হয়ে পড়েছে। যাত্রী, চা-বিক্রেতা সবাই হতাশ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্যের অজুহাত দেখিয়ে দেশে দাম বাড়ালেও বাস্তবতা হলো আন্তর্জাতিক বাজারে এখন তেলের দর ৯০ ডলারে নেমে এসেছে। ধীরে আরও কমে আসছে।
তিনি বলেন, মূলত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসায় জ্বালানি তেলের দর বাড়ানোর টেকনিক নিয়েছে সরকার। এক লাফে এত বেশি মূল্যবৃদ্ধি অযোক্তিক, অমানবিক ও অবিবেচক। সরকারের বেপরোয়া দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অপরিণামদর্শিতার দায় পুরোপুরি সাধারণ মানুষের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।