মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বৈঠকে বসতে সম্মত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) দীর্ঘ ফোনালাপকালে এ ব্যাপারে একমত হন তারা। খবর এএফপি ও আল-জাজিরার।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রায় দেড় বছরে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এখন পর্যন্ত পাঁচবার ফোনালাপ করেছেন বাইডেন। তবে এবারই প্রথম সামনাসামনি সাক্ষাৎ করবেন তারা। তবে কোনো পক্ষই বৈঠকের দিন-তারিখ সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য এখনো জানায়নি।
বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ফোনালাপকালে বাইডেন ও জিনপিং সামনাসামনি বসার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। এবং এ ব্যাপারে একমতও হয়েছেন তারা।
মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সম্ভাব্য তাইওয়ান সফরকে ঘিরে ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের তুমুল উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার একে অপরের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন বাইডেন ও জিনপিং।
২ ঘণ্টা ১৭ মিনিট ধরে চলা ওই ফোনালাপে তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে ‘আগুন নিয়ে না খেলা’র হুঁশিয়ার দেন চীনা প্রেসিডেন্ট। বলেন, ‘যারা আগুন নিয়ে খেলে তারা কেবলই পুড়ে যাবে। (আমরা) আশা করি যুক্তরাষ্ট্র সেটি পরিষ্কারভাবেই দেখতে পারছে।’
দুই নেতার কথোপকথনের বিস্তারিত প্রকাশ করে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম শিনহুয়া জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জিনপিং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘এক-চীন নীতি’ মেনে চলা উচিত। আর তাইওয়ানের স্বাধীনতার ব্যাপারে চীন যে ঘোর বিরোধী এবং তারা তাইওয়ানে কোনো বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপও মানতে নারাজ সে কথা আবারও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো আরও বলছে, দীর্ঘ এ ভিডিও কনফারেন্সে দুই নেতার মধ্যে তাইওয়ান ইস্যু ছাড়াও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিষয়ে কথা হয়েছে।
বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েন ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কিন্তু এর মধ্যেই সম্প্রতি উভয় দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে প্রায় নিয়মিতই ফোনালাপ হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার পঞ্চমবারের মতো আলাপ করলেন বাইডেন ও জিনপিং। এর আগে সবশেষ চার মাস আগে টেলিফোন আলাপ করেন তারা।
রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানের এক মাস পর গেল ১৮ মার্চ এক ভিডিও কলে প্রায় দুই ঘণ্টা কথা বলেন বাইডেন ও জিনপিং। মস্কোর সঙ্গে বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। অন্যদিকে বাইডেনকে জিনপিং বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান সংঘাত ‘কারও স্বার্থেই হচ্ছে না।’
বৃহস্পতিবার ভিডিও কলে আলাপ শেষ হওয়ার পর হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই নেতার মধ্যকার আলাপ দুই ঘণ্টা ১৭ মিনিট স্থায়ী হয়।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, তাইওয়ান ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের নীতি বদলায়নি। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ান প্রণালীতে বিদ্যমান অবস্থা পরিবর্তন কিংবা শান্তি ও স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ন করার একতরফা চেষ্টারও ঘোর বিরোধী।
স্পিকার পেলোসিকে নিয়ে সবশেষ বুধবার (২৭ জুলাই) প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনকে সতর্ক করে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, তিনি তাইওয়ান সফরে এলে তা হবে চীনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি মারাত্মক হুমকি। এর পরিণতি ভোগ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে।
এরপর সবশেষ বুধবার বেইজিংয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, ‘আমরা স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের তীব্র বিরোধিতা করছি।’
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে যায় এবং চীনের দৃঢ় অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ জানায়, তাহলে তাদের এর পরিণাম ভোগ করতে হবে।