ভারতের কেরালায় প্রথম মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত এক রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি চার দিন আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ভারতে ফিরেছিলেন। উপসর্গ দেখে তার নমুনা পাঠানো হয় পুণের গবেষণাগারে। এরপর তার মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। খবর এনডিটিভির।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি বিদেশে এক মাঙ্কিপক্স আক্রান্তের সংস্পর্শে আসেন। পরীক্ষায় তার শরীরেও সংক্রমণ পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর বিশেষজ্ঞদের একটি দলকে কেরালায় পাঠাবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই দলটি রাজ্য সরকারকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রুখতে সহায়তা করবে।
বীণা জর্জ আরও বলেন, মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ দেখার পর তার নমুনা পাঠানো হয় পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে। ওই ব্যক্তি বিদেশে এক মাঙ্কিপক্স আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছিলেন। তাই দ্রুত তার পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদিকে ভারতে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের জন্যও এটা অশনিসংকেত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যাতায়াত বেশি । এছাড়া রোগটি সংক্রামক হওয়ার কারণে বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে মাঙ্কিপক্স। বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোতে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিমানবন্দরগুলোতে সতর্কতা জারি করে সরকার। বিদেশ ফেরত কাউকে অসুস্থ মনে হলে বা সংক্রমণের কোনো রকম উপসর্গ দেখা দিলে তাকে আইসোলেশনে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গুটিবসন্ত যে গোত্রের ভাইরাস থেকে হয়, মাঙ্কিপক্সও সেই গোত্রের। এ ভাইরাসের সংক্রমণেও জ্বর, সারা গায়ে বড় বড় ফুসকুড়ির মতো র্যাশ বের হবে। ত্বক শুকিয়ে খসখসে হয়ে যাবে, প্রচণ্ড চুলকানি-জ্বালা হবে র্যাশের জায়গায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) মাঙ্কিপক্স ভাইরাসকে কাবু করার উপায় নিয়ে ভাবছে। নানারকম ভ্যাকসিন ও ওষুধপত্র নিয়ে গবেষণা চলছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, একজন অন্যজনের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে, বিশেষ করে ত্বকের সংস্পর্শে, এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। বড়দের থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে শিশুদের মধ্যেও।
করোনাভাইরাসের মতো এতটা দ্রুত ছড়ায় না মাঙ্কিপক্স। কিন্তু রোগটি এখন মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। মাঙ্কিপক্স প্রাদুর্ভাবের কারণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হবে কিনা; তা নিয়েও ভাবছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের ব্যাঙ্গুই প্যাসটুয়ার ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ইমানুয়েল নাকুন বলেন, যখন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কোনো রোগ ছড়ায়, তখন সেটিকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হচ্ছে না। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে ছড়ালেই জনস্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হচ্ছে।
মাঙ্কিপক্সের ওষুধ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছেন এই গবেষক। তিনি বলেন, যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোনো জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে, তবে অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদি প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সমানভাবে পদক্ষেপ নেয়ার রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে, তবে প্রতিটি দেশের জন্যই তা উপকারী হবে।