আইসিসির সেই নিষেধাজ্ঞা কেটে গেছে অনেকদিন হলো। মাঠে ফিরে নিজের চেনা ছন্দ দেখাচ্ছেন বছর খানেক ধরে। তবুও টাইগারভক্তরা কী যেন একটা মিস করছেন, সেটা হলো- সাকিব আল হাসানের ক্যাপ্টেন্সি। তবে টেস্ট দলের যে হাল, আর বিসিবি কর্তাদের যে বক্তব্য তাতে সাকিবের কাঁধে আবারও যেতে পারে সাদা দলের নেতৃত্ব।
বাংলাদেশ দলের তিন ফরম্যাটে এখন তিন অধিনায়ক। এর মধ্যে ওয়ানডে দলের নেতৃত্বে আছেন তামিম ইকবাল, টি-টোয়েন্টির আর্মব্যান্ড মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে। আর সাদা পোশাকের ক্রিকেটে টাইগাররা খেলছেন মুমিনুল হকের সেনাপতিত্বে। তবে টেস্টে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে। তাই সেনাপতি পরিবর্তনের গুঞ্জন উঠেছে।
চারিদিকে শোরগোল উঠেছে অধিনায়কত্বের চাপে ব্যাটিংয়ের মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছেন মুমিনুল। যিনি ব্র্যাডম্যানের গড় ছুঁয়ে ফেলা ব্যাটিং করছিলেন, তিনি কিভাবে যেন একেবারে নিস্তেজ হয়ে ফর্ম হারিয়ে ফেললেন। তাই বোর্ড কর্তারাও যে এটি নিয়ে ভাবছেন সেটি স্পষ্ট।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সম্প্রতি জানালেন, আজকালের মধ্যেই মুমিনুলের সাথে কথা বলে অধিনায়কত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জোর, গুঞ্জন মুমিনুলকে সরিয়ে সাদা পোশাকের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে সাকিব আল হাসানকে।
আইপিএলের ফাইনাল শেষে দেশে ফিরে বিসিবি সভাপতি জানালেন, উইন্ডিজ সফরে কোনো পরিবর্তন আসছে কিনা এটা আগাম বলাটা মুশকিল। আগে ওর (মুমিনুল) সাথে একটু বসে নেই, তারপর জানাবো।
সূত্র বলছে, বিসিবির হিসাবটা একটা সরল জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে। ব্যাটিং নাকি অধিনায়কত্ব- কোনটা ভালো হবে মুমিনুল হকের জন্য, এটি নিয়েই তার সাথে বৈঠকে বসতে চায় বিসিবি। অধিনায়কত্ব মুমিনুলের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে সেটি এরইমধ্যে দাবি করছেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস।
শুধু কর্তারাই নন, খেলোয়াড় গড়ার কারিগর হিসেবে পরিচিত কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিমও মনে করেন অধিনায়কত্বের চাপেই ব্যাটিংয়ের মৌলিক দিকটায় জটিলতা পাকিয়েছেন মুমিনুল।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের আরেক নীতিনির্ধারক খালেদ মাহমুদ সুজনও মুমিনুলের অধিনায়কত্ব নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ক্যাপ্টেন্সির প্রভাব থাকছে কিনা এটা বড় প্রশ্ন। যদি থাকে আমরা এটা (অধিনায়কত্ব) চাই না। আমরা মুমিনুলের ব্যাটিংটা চাই, এটাই গুরুত্বপূর্ণ। ও সময় নিয়ে সেঞ্চুরি করুক, আমরা এটা চাই।
তিনি আরও যোগ করেন, আমাদের সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরির মালিক সে। তার গড় ছিল ৫০ এর ওপরে। হঠাৎ করে পারফর্ম করছে না, তাই প্রশ্ন থেকেই যায়। এটার উত্তর মুমিনুলই সবচেয়ে ভালো দিতে পারবে।
মিরপুর টেস্টের বিবর্ণ পারফরম্যান্সের পরও দলে এই মুহূর্তে মুমিনুলের বিকল্প নেই উল্লেখ করে তাকে সমর্থন জানানোর আহ্বান জানান সাকিব। বলেন, কোনো দলের অধিনায়কের জন্য এই সময়টা সবচেয়ে কঠিন। তাকে আমরা কীভাবে সমর্থন করছি এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের টেস্ট ক্রিকেটের পরিস্থিতি অনুযায়ী, বর্তমানে মুমিনুলের চেয়ে ভালো বিকল্প আমাদের হাতে নেই
তবে যতই ঢাল হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন সাকিব, মুমিনুলের অধিনায়কত্বের আপাত অবসান হচ্ছে এবং সেটি সাকিবের হাতে সাদা পোশাকের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমেই হচ্ছে। বিসিবির পরবর্তী বোর্ডসভা ২ জুন। সেখানেই নেয়া হতে পারে এই সিদ্ধান্ত।
সাকিবকে টেস্টে পাওয়া না পাওয়া নিয়ে নানা সময়ে কথা উঠেছে। যদিও সম্প্রতি করোনার ধকল নিয়েই সাদা পোশাকে খেলে সাকিব যেন সব সংশয় হাওয়ায় মিশিয়ে দিয়েছেন। এখন অধিনায়কত্বের দায়িত্বও ঘাড়ে তুলে নেন কিনা সেটি দেখার বিষয়। তাতে টাইগার ভক্তরা হয়তো খুশিই হবেন- সাকিবকে যে নিয়মিত দেখা যাবে সাদা পোশাকে!
এসব কিছু নিশ্চিত হতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ২ জু পর্যন্ত। কেননা ওইদিন বিসিবির বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে উইন্ডিজ সফরের দল ঘোষণাও করা হবে। তখন সাদা পোশাকে সেনাপতি হিসেবে ঘোষিত হতে সাকিব আল হাসানের নাম।