ঢাকা শহরে যানজটের কারণে গাড়ি এমনিতেই যেন নড়ে না। যানজটে প্রতিদিন নাস্তানাবুদ হচ্ছেন শহরের বাসিন্দারা। ঢাকায় এখন গাড়ির গড় গতির চেয়ে হাঁটার গতিবেগ বেশি।
ঢাকা শহরের যানজট এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কত আগে বাড়ি থেকে বের হলে সময় মতো অফিসে পৌঁছানো যাবে সেটা বোঝার যেন আর কোনো উপায় নেই।
এমন পরিস্থিতিতে অফিসে দেরিতে পৌঁছালে বেতন কাটার নানা নিয়ম বিভিন্ন কোম্পানিতে চালু রয়েছে। সেনিয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানা যুক্তি রয়েছে চাকরিদাতা এবং কর্মীদের।
ঢাকায় তৈরি পোশাক খাতে অ্যক্সেসরিজ সরবরাহ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন জান্নাতুল ফেরদৌস। তার বর্তমান কর্মস্থলে সপ্তাহে তিনদিন দেরিতে ঢুকলে একদিনের বেতন কেটে নেয়া হয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বছর দুয়েক আগেও সোয়া এক ঘণ্টা আগে বাসা থেকে বের হলে সময়মত অফিসে পৌঁছাতে পারতাম। এখন সেটা দেড় ঘণ্টার বেশি।
বেতন কাটার এই নিয়ম যুক্তিসঙ্গত মনে করেন না ঢাকার গুলশানে বছর তিনেক অফিস সহকারীর কাজ করছেন এমন একজন বলছেন, আমার বাসা মিরপুর আর অফিস গুলশান দুই নম্বর। বাসা থেকে অফিসে যেতে সাধারণত এক ঘণ্টা লাগে। আমার অফিসের রিপোর্টিং টাইম সকাল আটটা। পনের মিনিট গ্রেস টাইম আছে। তবে আটটা বেজে ষোল মিনিটেও যদি ঢুকি এক মিনিটের জন্য এক ঘণ্টার বেতন কাটা হয়। মাঝে মাঝেই দেখা যায় ট্রাফিক জ্যামে পড়তে হয়, বাকিটা ইতিহাস।
বেসরকারি ও সরকারি পর্যায়ে নানা রকম নিয়ম চালু রয়েছে। কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের সাথে কথা বলে জানা গেছে তিন ধরনের নিয়ম প্রধানত চালু রয়েছে। যেমন সপ্তাহে পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে তিনদিন কর্মস্থলে ঢোকার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১৫ মিনিটের বেশি দেরি করলে এক দিনের বেসিক বা মূল বেতন কেটে নেয়া হয়। কিছু কোম্পানি একদিনের পুরো বেতনটাই কেটে নেয়।
এগুলোই মূলত বেশি আরোপ করা হয়। তবে অনেক কোম্পানি ভিন্ন নিয়মও চালু করেছে যেমন আধাবেলা অথবা মিনিট প্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণে বেতন কাটার নিয়ম।
আর সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া দেরি করে অফিসে এলে প্রথমে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কারণ যুক্তিসঙ্গত না হলে একদিনের মূল বেতন কেটে নেয়া যাবে। মাসে একাধিকবার দেরি করে এলে সর্বোচ্চ সাতদিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ কেটে নেয়ার বিধান রয়েছে।
টি. কে. গ্রুপের প্রধান মানব সম্পদ নির্বাহী, অজেয় রোহিতাশ্ব আল্ কাযী বলেন, আপনি যদি সময় মতো কাজে না আসেন এবং সেজন্য সবসময় পার পেয়ে যান তাহলে আপনি অন্যদের জন্য একটা খারাপ উদাহরণ তৈরি করছেন। যেমন ধরুন একজন কর্মী খুবই ভাল কাজ করে কিন্তু নিয়মিত দেরিতে আসে। তার কাজ ভাল হওয়ার কারণে যদি আমি তাকে ছাড় দিয়ে দেই তাহলে অফিসের বাকিরাও একই জিনিস অনুসরণ করবে।
বিকল্প ব্যবস্থা কি সম্ভব?
অফিসে দেরি করে ঢোকার সংস্কৃতি পছন্দ করে না কোন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিশেষ করে ঢাকার মতো শহরে যেখানে দিনকে দিন আরো বেশি সময় হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে হয়, তেমন শহরে বিকল্প কি কিছু আছে? একজন মানুষ আর কত আগে বের হতে পারেন?
কনফিডেন্স গ্রুপ অফ কোম্পানিজ লিমিটেডের প্রধান মানবসম্পদ ও কর্পোরেট কমিউনিকেশন কর্মকর্তা মোহামম্দ তারিকুল ইসলাম বলেন, বলছেন করোনাভাইরাসের মহামারি শুরুর পর তার প্রতিষ্ঠানে চালু হওয়া কিছু বিষয় তারা অব্যাহত রেখেছেন যা যানজটের দিনেও বেশ কাজে আসছে।
তিনি আরও বলেন, ‘প্যান্ডেমিকের সময়ে অফিসে সংক্রমণ ঠেকাতে আমরা কর্মীদের গাড়িতে আনা নেয়ার ব্যবস্থা চালু করেছিলাম। সেটা আমরা এখনও চালু রেখেছি। কোম্পানির গাড়ি যদি এসে পৌছাতে দেরি করে তাতে কর্মীর তো কোন হাত নেই। আমরা আরো যেটা করেছি আমরা অফিসে ঢোকার সময় এগিয়ে নিয়ে এসেছি। কারণ ঢাকার অনেক কর্পোরেট অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দশটায় শুরু হয়। এতে আমাদের অনেক লাভ হয়েছে।