ক্যাম্প ছেড়ে রোহিঙ্গারা সৈকতমুখী হওয়ায় সৈকতের পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটছে। বাড়ছে চুরি ছিনতাইও। পর্যটকরা বলছেন, ক্যাম্প ছেড়ে রোহিঙ্গারা সৈকতে আশায় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তারা। আর রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
কাঁটাতারের বেড়া কিংবা লোহার গ্রিল, কোনো কিছুতেই ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের আটকে রাখা যাচ্ছে না। দলে দলে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে আসছে রোহিঙ্গারা। চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে গাড়িযোগে কৌশলে চলে যাচ্ছে কক্সবাজার শহর বা সৈকত এলাকায়।
এদিকে বৃহস্পতিবার (৫ মে) সকাল থেকে সন্ধ্যায় ক্যাম্পের বাইরে অবস্থান করা ২০৩ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে ৮ এপিবিএন। পরে তাদের ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে বুধবার বিকেলে মাত্র ২ ঘণ্টার অভিযানে কক্সবাজার সৈকত থেকে সাড়ে ৪শ’ রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। সৈকতে পর্যটকদের সেবায় দায়িত্বরত কর্মী ও হকারদের দাবি, রোহিঙ্গাদের কারণে সৈকত এলাকায় বেড়েছে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ।
সৈকতের লাইফগার্ড কর্মী মোহাম্মদ ভুট্টো বলেন, রোহিঙ্গারা সৈকতে এসে পর্যটকদের উত্ত্যক্ত করে, টাকা চায়, আবার অনেক রোহিঙ্গা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া স্বল্পমূল্যে সৈকত এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে।
সৈকতের লাবণী পয়েন্টের ব্যবসায়ী তুহিন বলেন, রোহিঙ্গা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ায় আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, তেমনি পর্যটকরাও শঙ্কিত।
দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। পর্যটন মৌসুম বা ঈদের টানা ছুটিতে সৈকতের এ শহরে ছোটে হাজারো পর্যটক। তাই সৈকতে রোহিঙ্গাদের বিচরণ নিয়ে শঙ্কিত পর্যটকরাও।
সৈকতের লাবণী পয়েন্টে আগত পর্যটক ইয়াছিন বলেন, সৈকতে ঘুরে বেড়ানো অবস্থায় রোহিঙ্গাদের পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে যদি এভাবে সৈকতে চলে আসে তাহলে তো আমরা নিরাপত্তাহীনতায় পড়ব। কারণ রোহিঙ্গারা তো নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে জানালেন হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার।
তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক সরকারের নানা ব্যবস্থাপনা থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গারা কীভাবে পর্যটন এলাকা আসছে। এটা পর্যটন শিল্পের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রশাসনকে অনুরোধ করছি।
তবে পুলিশ জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিচরণ বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বয় করে কাজ করছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গাদের দ্বারা পর্যটকদের যদি কোনো ক্ষতি হয় তাহলে তাদের শনাক্ত করা খুবই চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। তাই অপরাধ প্রতিরোধ করতেই জেলা পুলিশ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
গেল এপ্রিল মাসে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্প থেকে বের হয়ে আসা সহস্রাধিক রোহিঙ্গাকে আটকের পর ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।