রাশিয়ার চলমান সামরিক অভিযানে ইউক্রেনের অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির একটা হিসাব দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সেই হিসাব মতে, রুশ অভিযানে এখন পর্যন্ত দেশটির ৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। তবে এ ক্ষতি শুধুমাত্র ভবন ও অবকাঠামোগত খাতে।
তবে বিশ্বব্যাংকের এ হিসাব ইউক্রেনের হিসাবের চেয়ে অনেকটাই কম। এখন থেকে তিন সপ্তাহ আগেই ইউক্রেনের অর্থনীতিবিদরা জানান, রাশিয়ার অভিযানে ইউক্রেনে প্রায় ৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। কিয়েভ স্কুল অব ইকোনোমিকসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার পর এক মাসে ইউক্রেনে ৩৭৮টি স্কুল, ৯২টি ফ্যাক্টরি ও গুদামসহ কমপক্ষে ৪ হাজার ৪৩১টি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়েছে।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এরপর গত প্রায় দুই মাস ধরে দেশটির প্রায় সবগুলো শহরে হামলা চালিয়ে আসছে রুশ বাহিনী। হামলায় খারকিভ ও মারিউপোলের মতো কয়েকটা শহর রীতিমতো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
অভিযানের ৫৬তম দিন বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) ইউক্রেনকে আর্থিক সহযোগিতার ওপর একটি সম্মেলন করে বিশ্বব্যাংক। সম্মেলনে ইউক্রেনের অবকাঠামো ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তুলে ধরেন এর প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস। তবে তিনি বলেন, এই হিসাবে যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ এখনও চলমান। তাই এর ক্ষয়ক্ষতিও বাড়ছে।’
এদিন ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান সামরিক অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক করেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট। বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে ম্যালপাস বলেন, চলতি বছর মার্চে বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্য, ভোজ্য তেল, দুধ-দুগ্ধজাত পণ্য, মাংস ও চিনির দাম ১৩ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এটা বিগত ৬০ বছরের মধ্যে রেকর্ড।
হুঁশিয়ারি দিয়ে ম্যালপাস বলেন, এসব খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ার প্রধান কারণ করোনা মহামারি। মহামারিতে শুরু হওয়া এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাত। এ সংঘাত চলতে থাকলে বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দামবৃদ্ধিও অব্যাহত থাকবে। এই মূল্যবৃদ্ধির হার শিগগিরই ১৩ থেকে ৩৭ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
গমসহ বিভিন্ন খাদ্যশস্য উৎপাদন ও রফতানিতে বিশ্বে দুই শীর্ষ দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন। দেশ দু’টির মধ্যে সংঘাতের কারণে শস্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে বেড়ে গেছে খাদ্যপণ্যের দাম। এছাড়া সংঘাতের কারণে বিশেষ করে ইউক্রেনীয় চাষীরা এবার সেভাবে ফসল ফলাতে পারছেন না, যা আগামীতে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।