এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন পুরোপুরি প্রস্তুত উদ্বোধনের জন্য। আধুনিক আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এ প্ল্যান্টে অপেক্ষাকৃত কম জ্বালানিতেই উৎপাদন হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ।
তবে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় কিছু কাজ এখনো বাকি। যদিও পায়রার সফল উৎপাদনকে নতুন ইতিহাস হিসেবেই দেখছে সরকার।
ধারণা ছিল, কয়লা পোড়ানো ধোঁয়ায় ছেয়ে যাবে আকাশ! দূষণের কালো থাবায় আঁধার নামবে চারপাশে। কিন্তু এমন সব শঙ্কা যেন বাতাসেই মিলিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত দেশের প্রথম এ বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে এখন ২৪ ঘণ্টার ব্যস্ততা সমানে চলছে উৎপাদন।
আমদানি করা কয়লা জাহাজে এনে কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে তা কোল ডোম হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে একেবারে বয়লার পর্যন্ত। দূষণ কমাতে এখানে সব ধরনের ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। ফলে বাইরের পরিবেশে কয়লার ময়লা যাওয়ার আশঙ্কাও অনেকাংশেই কম।
বেইজলোড এ পাওয়ার প্ল্যান্টটি থেকে ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড-সক্স ও নাইট্রোজেন অক্সাইড-নক্স প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়েছে সর্বাধুনিক পদ্ধতি, যা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেন সংশ্লিষ্টরা। পুরোদমে চালাতে প্রতিদিন অন্তত ১৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা পোড়াতে হয় পায়রায়।
এখানকার দুটি ইউনিট উৎপাদনে সক্ষম হলেও সঞ্চালন লাইনের অভাবে আপাতত এক তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা দেওয়া হচ্ছে দক্ষিণের বেশ কয়েকটি জেলায়। আধুনিক জেনারেটর, টার্বাইন প্যানেল, বয়লার ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার দিক থেকে এটি বিশ্বমানের বলে জানান নির্মাতা প্রকৌশলীরা।
পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শাহ আবদুল মাওলা বলেন, আমাদের প্রথম ইউনিট মে ১৫ তারিখ ২০২০ এ উদ্বোধন হয়েছিল এবং ৮ ডিসেম্বরে এ দুটো ইউনিট আমাদের চলছে। পুরো প্রকল্পে ব্যয়টা ছিল টু পয়েন্ট ফোর ফাইভ বিলিয়ন ডলার, যদিও তার থেকে প্রায় ১০০ মিলিয়ন সাশ্রয় হয়েছে, কম লাগবে। আমরা চার বছরের মধ্যে এ প্ল্যান্টার কাজটা শেষ করেছি। প্রথম ফেসটা যেটা শেষ হয়ে গেছে ১৩২০ মেগাওয়াট, আরেকটি ১৩২০ মেগাওয়াট তৈরি করছি, সেকেন্ড ফেস এটারও প্রায় ২১ থেকে ২২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে।
আগামী ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পে নিজে উপস্থিত হয়ে এই কেন্দ্রটি উদ্বোধন করবেন জানিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানান, চলতি বছরের শেষ নাগাদ পায়রার বিদ্যুৎ পাবে সারা দেশ।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, যে কয়লার পাওয়ার প্ল্যান্টটি নিয়ে প্রচুর কথা, এলাকার সব পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে, জনমানবহীন হয়ে যাবে, অনেকে অনেক রকম কথা বলেছে, এত বাধা বিপত্তি, এত কিছুর পরও সবকিছুকে মাথায় রেখে সময়মতো প্রকল্পের কাজ শেষ করাটা এটা একটা বড় বিষয় ছিল। প্রতিনিয়ত বাধা ফেস করতে হয়েছে। অনেকে চায় এ ধরনের উন্নয়ন বাংলাদেশে না হোক, এটাও একটা বড় রাজনীতি ছিল। রাজনীতিটা বড় ছিল যে, বড় প্রকল্পগুলো যাতে সাকসেসফুল না হয়, বাংলাদেশ যাতে বড় বিপদে পড়ে যায়, অনেক রকম কথা বলেছে। যে কর্মযজ্ঞ তৈরি হয়েছে আশেপাশে এলাকার পুরো পরিবেশ পরিবর্তন করে দিয়েছে। ওই এলাকাটা শহরের মতো হয়ে গেছে। দক্ষিণাঞ্চল এখন কর্মচাঞ্চল্যে ভরে গেছে। আমাদের এই যে নদী-নালা খাল-বিল, মানুষের জমি এগুলো মানিয়ে সময়মতো ট্রান্সমিশন লাইন নিয়ে আসা এটা বিশাল একটা ব্যাপার ছিল। তারপরও তো হচ্ছে কাজ। এখানে আমরা কিছুটা পিছিয়ে গেছি, ট্রান্সমিশন লাইন নিয়ে হয়তো এ বছরের শেষ নাগাদ কাজটা শেষ হয়ে যাবে।
২০১৬ সালে নির্মাণ শুরু করে মাত্র চার বছরের মাথায় উৎপাদনে সক্ষম হয় বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত এই তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পটি। চীনা এক্সিম ব্যাংকের ৮০ শতাংশ ঋণ সহায়তায় এর মোট নির্মাণ ব্যয় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।