দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে তৃণমূল গোছাচ্ছে আওয়ামী লীগ। শুরু হয়েছে সাংগঠনিক সফর, জেলায় জেলায় বর্ধিত সভা-প্রতিনিধি সভা। কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যস্ত তৃণমূলের কাউন্সিল শেষ করতে। আগামী নির্বাচনকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে চায় ক্ষমতাসীন দল, এমনটিই জানালেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
তৃণমুলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে জোরেশোরে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। প্রতিদিনই চলছে বিভিন্ন ওয়ার্ড-ইউনিয়ন, জেলা-উপজেলার সম্মেলন। ব্যস্ত সময় পার করছেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদকরা।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে সম্মেলন করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। খুব শিগগিরই তৃণমূল পর্যায়ের সম্মেলন শেষ হবে।
দলের ২০তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৫৮টি জেলার সম্মেলন শেষ হয়। আর গত ৮ই ফেব্রুয়ারি দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি মে মাসের মধ্যে বাকীগুলো শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
দলটির নেতারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে তৃণমুলের কর্মীদের বিরোধ মিটিয়ে তৃণমুলের চালিকাশক্তি যোগ্য নেতাদের হাতে দেবার মাধ্যমেই দলকে শক্তিশালী করতে চান তারা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে আবারো ক্ষমতায় আসবে আওয়ামী লীগ এমন বার্তাই দিলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী দল। এর বিশাল কর্মী বাহিনীকে সংগঠিত করার কাজ চলছে। আগামী নির্বাচনে আবারো বিপুল ভোটে জয়ী হবে আওয়ামী লীগ।
কাউন্সিলের পাশাপাশি সাংগঠনিক সফরও অব্যাহত থাকবে বলে জানান তারা।
আগামী নির্বাচনকে তারা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। সংগঠনটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর থেকে দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়ে সংসদ ও সরকার গঠন করে দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু এজন্য আওয়ামী লীগকে অনেক মাশুল দিতে হচ্ছে। তাদের ভাষায়, ‘বিরোধী দলগুলো গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে আওয়ামী লীগের সাথে সহযোগিতা না করায় দেশে-বিদেশে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিরোধী দল নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে দেয়ায় তাদের অতিউৎসাহী কিছু নেতা-কর্মী এবং প্রশাসনের একটি অংশ সুবিধা পাওয়ার লোভে নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনে কোথাও কোথাও সমস্যার সৃষ্টি করেছে, যা গণতান্ত্রিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের ইমেজ ক্ষুণ্ন করেছে। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারে অধীনে অনুষ্ঠিত হলেও সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কেউ যেন প্রশ্ন তুলতে না পারে, সেভাবেই তারা বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারণ তারা আর কোনো বিতর্কিত নির্বাচনের দায় নিতে চায় না।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে তাদের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সভায় দলকে নির্বাচনমুখী করতে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দেয়ার আগে তৃণমূল পর্যায় থেকে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। জনমত যাচাই ও জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে তিনি তথ্য-উপাত্ত এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা, এলাকায় ও জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব, ত্যাগ-তিতিক্ষা, নেতা-কর্মী ও জনগণের সাথে সম্পর্ক এবং চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোনো অভিযোগ আছে কি না খোঁজখরব নিচ্ছেন। একাধিক সূত্রের মাধ্যমে তা যাচাই-বাছাই করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে আওয়ামী লীগর বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে দল ও সহযোগী সংগঠনকে তৃণমূল পর্যন্ত সুসংগঠিত করা। সদস্য পদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ, অপপ্রচারের জবাব এবং তাদের সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো ব্যাপকভাবে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে তুলে ধরা। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে প্রচার সেল গঠনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ইতিবাচক ইমেজ তৈরি করার ওপর জোর দেয়ার তৎপরতা চালানোর কর্মসূচি নিয়েছে। কেন্দ্র থেকে নিয়ে তৃণমূল সকল পর্যায়ের দ্বন্দ্ব ও সংঘাত নিরসন করে সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সমমনা দলগুলোকে তাদের জোটে শরিক করা। সাথে সাথে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত দলগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যেই তৃণমূল গোছানোর কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। করোনা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ মাঠপর্যায়ের সম্মেলন শুরু করেছে। দলকে কোন্দলমুক্ত করতে সম্মেলনের আগে বিরোধ মেটাতে তৃণমূলের নেতাদের সাথে বৈঠক করে হুঁশিয়ার করা হচ্ছে।