রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের তিন সপ্তাহ চলছে। দিন যত যাচ্ছে বাড়ছে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের সংখ্যা। দেশটির কয়েক লাখ মানুষ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। যাদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ১৪ লাখ শিশু ইউরোপের দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।
রাত কিংবা তীব্র শীত কোনো কিছুই যেন প্রভাব ফেলছে না ইউক্রেনের শরণার্থীদের। বিছানা-কম্বল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটে বেড়ানোই যেন এখন তাদের লক্ষ্য। কখনো মলদোভা, কখনো আবার পোল্যান্ড। কেউ কেউ আবার আশ্রয় না পেয়ে ছুটছেন অন্যত্র।
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের তৃতীয় সপ্তাহ চলছে। অথচ বারবার যুদ্ধ বিরতির কথা বললেও দেশটিতে বন্ধ হচ্ছে না রুশ হামলা। এদিকে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শরণার্থীদের সংখ্যা। সবচেয়ে বেশি শরণার্থী জড়ো হয়েছেন পোল্যান্ড, মলদোভা ও রোমানিয়ায়। পোল্যান্ডের পরই গেল শনিবার (১২ মার্চ) সবচেয়ে বেশি ইউক্রেনীয় পাড়ি জমিয়েছেন হাঙ্গেরিতে। এর আগের দিনও প্রায় দশ হাজারের মতো শরণার্থী দেশটিতে আশ্রয়ের খোঁজে গেলে ফিরিয়ে দেওয়া হয় অনেককেই।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, মোট শরণার্থীর প্রায় অর্ধেকই শিশু। মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সংস্থাটির শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানায়, এ পর্যন্ত অন্তত ১৪ লাখ শিশু ইউরোপের দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। ফ্রান্সেও শিশু শরণার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো যখন লাখো শরণার্থী পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় খুঁজছেন। যুক্তরাজ্যের সরকার রুশ অভিযানের পর পালিয়ে আসা ইউক্রেনীয়দের সাহায্যে ‘ইউক্রেনের জন্য বাসা’ নামের একটি স্কিম চালু করেছে। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত নাগরিকরা যদি তাদের বাসার কোনো অংশ এমনকি একটি রুমও ইউক্রেন থেকে আগতদের জন্য বরাদ্দ রাখেন তবে তাদের অন্তত ছয় মাসের জন্য ৩৫০ পাউন্ড করে অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।
রুশ সামরিক অভিযানের হাত থেকে বাঁচতে প্রতিদিনই ইউক্রেন ছেড়ে পালাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত ২৫ লাখের বেশি মানুষ প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড ও রোমানিয়াসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর নতুন সংকটে ইউরোপ। মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ অভিমুখে অভিবাসী ঢলের মধ্যেই এবার ইউক্রেন থেকে প্রতিদিনই ইউরোপে আশ্রয় নিচ্ছেন হাজার হাজার শরণার্থী। এ অবস্থায় ইউক্রেন সীমান্তে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানবপাচারকারীরা। বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আশ্রয় দেওয়ার নামে নারী ও শিশুদের বিভিন্ন দেশে পাচার করছেন তারা। অনেক নারী শরণার্থীরা ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।