রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এবার বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। পোশাক রফতানিতে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছেন পোশাকখাত সংশ্লিষ্টরা।
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রপক্ষ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর শিপিংলাইন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করায়, বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানি অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। একদিকে বিদেশি শিপিংলাইনের জাহাজ, গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে রাশিয়া যেতে রাজি নয়; অন্যদিকে আমদানি কিংবা রফতানির ক্ষেত্রে এলসি খোলা বন্ধ রেখেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে করে অফডকে জমা হয়েছে রাশিয়াগামী ১৬৬ কনটেইনার পণ্য।
বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, অপ্রচলিত বাজার হলেও গত অর্থ বছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাড়ে ৪১ কোটি মার্কিন ডলারের গার্মেন্টস পণ্য রফতানি হয়েছে রাশিয়ায়। কিন্তু ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ায় পণ্য পাঠানো বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে গ্লোবাল ম্যাসেজিং নেটওয়ার্ক-সুইফট রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণাতেই এই জটিলতা।
এ অবস্থায় রাশিয়ায় পণ্য রফতানিতে আর্থিক লেনদেনেও রাজি নয় ব্যাংকিং খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে বিপর্যয়ের কবলে পড়তে যাচ্ছে দেশের গার্মেন্টস খাত।
বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদেরকে ক্রেতারা ইতিবাচক আশা দেখাচ্ছে। তবে ব্যাংক ও শিপিং কোম্পানিগুলো আমাদের ইতিবাচক সাড়া দিতে না পারলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া কঠিন। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পোশাক খাতের ভবিষ্যত ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এছাড়া চলমান অর্ডারের ভবিষ্যত নিয়েও আমরা শঙ্কিত।’
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য বোঝাই করে বিদেশি জাহাজগুলোকে সিঙ্গাপুর কিংবা শ্রীলংকার ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হয়ে রাশিয়ার বন্দরগুলোতে পৌঁছাতে হয়। কিন্তু বড় বড় শিপি লাইনগুলো পশ্চিমা দেশগুলোর মালিকানায় থাকায় ক্ষতি এড়াতে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস পণ্য বুকিং নিতে অনীহা প্রকাশ করছে। এমনকি আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসগুলোও রাশিয়ায় কোনো ডকুমেন্টস প্রেরণ করছে না।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ আরিফ হোসেন বলেন, ‘রাশিয়ার সাথে আমাদের রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য বিক্রেতারা একটি অনিশ্চিত সময় কাটাচ্ছে।’
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরের পার্শ্ববর্তী অফডকগুলোতে গার্মেন্টস পণ্য বোঝাই ১৬৬টি কনটেইনার আটকা পড়েছে। এক্ষেত্রে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো রাশিয়ার পরিবর্তে ভিন্ন কোনো বন্দরে পণ্যের ডেলিভারি নিতে রাজি হলে সমস্যা সমাধানে কিছুটা আশার আলো দেখছে আমদানি-রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো।
উল্লেখ্য, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৩ হাজার ১৫০ কোটি ডলার পণ্য রফতানি করেছে। এর ৬০ শতাংশেরই ক্রেতা ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।