একটি ভাষণ, স্বাধীনতাকমী বাঙালিকে নিয়ে আসে মুক্তির মিছিলে। সবাইকে পরিণত করে যোদ্ধায়। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের সে ভাষণেই রচিত হয় বাঙালির চিরায়ত স্বপ্ন স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি। তৎকালীন ছাত্রনেতাদের মতে, এ ভাষণই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণা। যুদ্ধের প্রস্তুতি আর দেশকে স্বাধীন করতে স্পষ্ট নির্দেশনার এ ভাষণ মানুষের আকাংখার প্রতীক।
হৃদয়ের সব আবেগ নিংড়ে পাকিস্তানের শোষণ আর বঞ্চনার কথা রেসকোর্স ময়দানে জনতার সমুদ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার বজ্রকণ্ঠে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
বঙ্গবন্ধুর সে ভাষণ যেন অনবদ্য এক ইতিহাস। মন্ত্রমুগ্ধ জনতা সেদিন তার এই ভাষণ বুকে ধারণ করেই মুক্তির স্বাদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, তার প্রতিটি কথাই ছিল একটি মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের কথা। বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে গ্রামে গ্রামে, মহল্লায় মহল্লায়, শহরে বন্দরে সব জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার হুকুম দিয়েছিলেন।
২০ কি ২২ মিনিটের সে ভাষণের শেষ শব্দ জয় বাংলা-ই যেন স্বাধীনতাকামী প্রতিটি বাঙ্গালীকে পরিণত করে এক একজন যোদ্ধায়। দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে সেই ভাষণ সংরক্ষণ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো তা স্পষ্ট সহযোগি চিত্রগ্রাহক একুশে পদক জয়ী আমজাদ আলীর বয়ানে।
৭ মার্চের ভাষণের সহকারী চিত্রগ্রাহক ও সংরক্ষক আমজাদ আলী বলেন, আমরা প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে দেখি আর্মি মেশিনগান নিয়ে বসে আছে মঞ্চের দিকে তাক করে। আমি তখন সেখান থেকে চলে যাই। ভাগ্য ভাল আমি বেঁচে থাকব। আমাকে আর তারা থামায়নি। পরে সেখান থেকে কার্জন হলের পাশ দিয়ে আমি চকবাজার চলে যাই।
তৎকালীন এই চিত্রগ্রাহকের মত, জয় বাংলা সেদিনই জাতীয় স্লোগান হয়ে রচিত করেছিলো বাঙ্গালীর সাধের স্বাধীন বাংলাদেশের পথ।
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ সোমবার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ পালন করা হবে। দেশে দ্বিতীয়বারের মতো দিনটি জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ পৃথিবীর কালজয়ী ভাষণগুলোর অন্যতম। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তিকামী জনগণকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে ওই ভাষণ ছিল এক মহামন্ত্র। একটি ভাষণ কিভাবে গোটা জাতিকে জাগিয়ে তোলে, স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উত্সাহিত করে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ তার অনন্য উদাহরণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘আজ বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে রচনা করেছিলেন ১৮ মিনিটের এক মহাকাব্য। গত বছর আমরা এই মহাভাষণের সুবর্ণ জয়ন্তী এবং আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছি। এ বছর আমরা ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর এবং মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। এমনই এক মাহেন্দ্রক্ষণে আমি গভীর শ্রদ্ধায় প্রথমেই স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ, দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোন এবং অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে যাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ’