এক ডজনেরও বেশি পরিচয় তার। কাউকে কাবু করতে যখন যে পরিচয় দরকার তখন তা ব্যবহার করেন। কখনো হয়ে যান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, কখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বড় কর্মকর্তা। ফোন দেন মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের। প্রধানমন্ত্রীর করোনা ট্রাস্টে সহায়তার নামে দাবি করেন টাকা। ক্ষমতা রাখেন দলীয় পদ পদবি ও নমিনেশনে পাইয়ে দেওয়ারও। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই প্রতারককে নাটোর থেকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনের নাম ভাঙ্গিয়ে চলছে প্রতারণা। দলীয় নেতাকর্মী এবং সংসদ সদস্যদের কাছে দাবি করা হচ্ছে চাঁদা। বিষয়টি নজরে আসার পর প্রথমে একটি জিডি করা হয়। পরবর্তীতে এস এম কামালের হয়ে এক ব্যক্তি একটি মামলা করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে ফোন দিয়ে বিভিন্নভাবে নগদ অর্থ, এছাড়া বিকাশে অর্থ নেওয়া হয়।
বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব আসে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগে। নাটোর থেকে গ্রেফতার করা হয় আবু হোরায়রা ওরফে খালিদ নামে এক প্রতারককে। জানা যায় গত তিন বছর ধরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা করে আসছিল সে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খালিদ জানায় আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বড় কর্মকর্তা, সাবেক ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারিসহ একডজনেরও বেশি লোকের পরিচয় ব্যবহার করত সে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নমিনেশন, দলীয় পদ-পদবির লোভ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে সে। করোনা রোগীদের অর্থ সহায়তায় প্রধানমন্ত্রীর ট্রাস্টে টাকা প্রদানের কথা বলে মন্ত্রী ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যদেরও ফোন দিতেন তিনি।
ডিবির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার নাজমুল হক বলেন, টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা তারা অনলাইন থেকে সংগ্রহ করত। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় বিভিন্ন প্রার্থীকে ফোন করে মনোনয়ন পাইয়ে দেয়ার কথা বলে অর্থ নিয়েছেন।
পুলিশ বলছে, মাধ্যমিক পাস খালিদ কখনো কখনো নিজেকে পরিচয় দিতেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেও। ডিবির উপপুলিশ কমিশনার শরীফুল ইসলাম বলেন, সে বিভিন্ন জায়গায় তদবিরও করত বিভিন্ন চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য। সে সম্পূর্ণ অর্থের বিনিময়ে এই কাজ করত। এতে যে সিম কার্ড সে ব্যবহার করত তা অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। আমি প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখেছি সে লাখ লাখ টাকা নিয়েছে।
এই ধরনের প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই বলছেন গোয়েন্দারা।