খোকা থেকে শেখ সাহেব-পরে বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা-সময়ের পরম্পরায় নানা উপাধিতে ভূষিত হন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে।
১৯৬৯ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে বাঙালির অবিসংবাদিত এই নেতাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেয়া হয়েছিল।
একজন নেতা চাই, জনগণের নেতা-যিনি অধরা স্বাধীনতার স্বাদ পাইয়ে দিয়ে, মুক্ত অর্থনীতির চাকা ঘুরাবেন, আলোর ঝিলিকে ফোটাবেন বাংলায় আনন্দের ফুল। দেশ ভাগ হল। বাংলা দিখণ্ডিত হল। পূর্ব পাকিস্তান চাদরে স্বাধীনতার নামে নতুন পরাধীনতা-শোষণের মুখে বাংলা, বাংলার মানুষ। মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়ার পায়তারা, অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক বৈষম্যে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ দিশেহারা।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি শেখ মুজিবুর রহমান অনুধাবন করেন স্বাধীনতা ছাড়া বাঙ্গালির মুক্তি নেই। ধীরে ধীরে বাঙালিকে স্বপ্ন দেখাতে থাকেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের। ১৯৬৬তে এক ধাপ এগিয়ে ঘোষণা করেন বাংলার অঘোষিত স্বাধীনতার সনদ ৬ দফা। নড়ে চড়ে বসে আইয়ুব খার স্বৈরাচারি শাসন ব্যবস্থা।
স্বাধিকার আন্দোলন দমাতে শেখ মুজিবসহ ৩৫ জনের নামে দায়ের করা হয় আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা। গ্রেপ্তার হন তিনি। উত্তাল হয়ে উঠে বাংলা। ৬৯ এর ৪ঠা জানুয়ারি গঠিত হয় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ৬ দফাকে যুক্ত করে ঘোষণা করা হয় ১১ দফা।
আন্দোলনে শহিদ হন আসাদ, মতিউর, মকবুল, ক্যান্টনমেন্টে রুস্তম ও সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক শামসুজ্জোহা। তাদের রক্তের বিনিময়ে সৃষ্টি হয় গণঅভ্যুত্থান।
সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয় শেখ মুজিবুর রহমানকে সংবর্ধনা দেয়ার। দিন ঠিক করা হয় ১৯৬৯ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি। স্থান তখনকার রেসকোর্স ময়দান। লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহমেদ সেদিনই শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন।
লাখো জনতা দুই হাত তুলে তোফায়েল আহমেদের সেই প্রস্তাব সমর্থন করেন। সেই থেকে জাতির পিতা শেখ মুজিবের নামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি।