রেলের অনুমোদিত ১ হাজার ৪৬৮টি লেভেল ক্রসিংয়ের ৯০৪টিতেই নেই গেটকিপার। এর বাইরেও এক হাজার ৩২১টি অবৈধ লেভেল ক্রসিং বিভিন্ন সংস্থা তাদের ইচ্ছেমতো বানিয়েছে। এসব অরক্ষিত ক্রসিংয়ের কারণে প্রতিনিয়তই ঝরছে প্রাণ। পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান বললেন, গেল পাঁচ বছরে রেল দুর্ঘটনায় ৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকা, টাঙ্গাইল, পঞ্চগড়, রাজশাহীসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাতে জানুয়ারির শুরু থেকে এ যাবত ১৪টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৭ জন। মূলত ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী পরিবহনের সংঘর্ষ, লেভেল ক্রসিংয়ের সিগন্যাল না মানা, জনবল কম থাকায় সময়মতো গেট ফেলতে না পারাসহ নানা কারণে প্রতিনিয়তই ঝরছে প্রাণ।
রাজধানীর উত্তরার পাঁচ নম্বর সেক্টরের পার্শ্ববর্তী এলাকা জাফর মার্কেট। দায়িত্বরত গেটকিপার আলমগীরকে দুটি গেট একাই সামাল দিতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তিনি জানান, গেট ফেলা এবং ওঠানোকে কেন্দ্র করে চড়-থাপ্পড়ও খেতে হয় তাদের, কিন্তু দুর্ঘটনার তোয়াক্কাই করেন না কেউ কেউ।
আলমগীর বলেন, আমরা ৮ ঘণ্টা করে ডিউটি করি। তিনজনের একজন অসুস্থ হলে তখন আমার ১৬ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। আমি যদি অসুস্থ হয়ে যাই বা বাথরুমে যাই তাহলে গেট দেখবে কে? তার মতোই অবস্থা আজমপুর স্টেশনের গেটকিপার মোহাম্মদ সাইফুলেরও।
এছাড়া কোথাও আবার ক্রসিং থাকলেও একেবারেই নেই গেটকিপার। কোথাও বিভিন্ন সংস্থা নিজেদের মতো করে ক্রসিং বসিয়ে নিয়েছে। রেলের লেভেল ক্রসিংয়ে নানা সমস্যার কথা জানান ভুক্তভোগীরা।
এক পথচারী বলেন, সিগন্যাল এক পাশে আছে, আরেক পাশে নাই। এ সিগন্যালের কারণে আমাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান বলছেন, রেলের অব্যবস্থাপনার মহাজটে দুর্ঘটনায় সীমাহীন ক্ষতি হচ্ছে রাষ্ট্রের। দুর্ঘটনায় যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগ ৩০-৪০ বছর বয়সী। যারা আমাদের অর্থনীতিতে আরও অবদান রাখতে পারত।
তিনি বলেন, শুধু যে যানবাহনের ক্ষতি হচ্ছে, তা নয়। লোকবল ও বগি বড় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ ক্ষতিগুলো আমলে নিলে ৫-১০ হাজার কোটিতে গিয়ে ঠেকবে।
ট্রেনের লেভেল ক্রসিং নিয়ন্ত্রণে আনতে সনাতন থেকে লাইনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের পাশাপাশি জনবলের সক্ষমতা বাড়ানোর কথাও বলেন এ পরিবহন বিশেষজ্ঞ।