ঢাকার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রত্যাশা করে যুক্তরাষ্ট্র: কূটনীতিক

1296
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ২০২২ সালে ঢাকার সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৫০ বছরের সম্পর্কের ধরন প্রসঙ্গে মার্কিন কূটনৈতিক সূত্রসমূহ বলছে, ওয়াশিংটন বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের পাশাপাশি বড় ধরনের নিরাপত্তাও প্রত্যাশা করে।

চলতি সপ্তাহে সাংবাদিকের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক মত বিনিময়কালে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলেন, ওয়াশিংটন মূলত বাংলাদেশের সাথে ‘দৃঢ়’ ও ‘বৃহত্তর’ সম্পর্ক চায়।

তারা দৃশ্যত এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, বিদ্যমান সময় শক্তিশালী নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার সুযোগ তৈরি করেছে, যখন দুটি দেশ চলতি বছর তাদের সম্পর্কেরও সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে।

মার্কিন দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছরে ব্যবসা, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমাদের সেই শক্তিশালী সম্পর্কগুলোকে গড়ে তোলার প্রকৃত সুযোগ তৈরি হয়েছে।

কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বিগত বছরগুলোতে যে ধরনের নিরাপত্তা সহযোগিতার সম্পর্ক ছিল তার সরকার তাই অব্যাহত রাখতে চায়। তবে, তা নতুন প্রণীত মার্কিন নীতি ‘লেহি ল’ অনুযায়ী।

তিনি বলেন, প্রতিটি দেশের মার্কিন নিরাপত্তা সহযোগিতা পাওয়ার বিষয়ে বৈশ্বিক প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতেই সবর্শেষ এই নীতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনকে মানবাধিকারের প্রতি অংশীদার দেশগুলোর নিরাপত্তার সংস্থার মনোভাব কঠোরভাবে যাচাই করতে বাধ্য করেছে।

আরও পড়ুন : বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার যৌক্তিকতা নেই: মার্কিন কংগ্রেসম্যান

তারা বলছেন, লেহি আইনের সর্বশেষ সংস্করণ অনুযায়ী মার্কিন কর্তৃপক্ষ প্রাপকদেশসমূহের নিরাপত্তা ইউনিটসমূহের বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ও ট্র্যাক রেকর্ড বিশেষ করে চরমভাবে মানবাধিকার লংঘনের বিষয়গুলো পরীক্ষা করবে।

শর্তসমূহ

ফরেন্স অপারেশনস এপ্রোপ্রিয়েশান অ্যাক্ট এর অংশ হিসেবে ১৯৯৭ সালে সিনেটের লেহি প্রথম যে আইন চালু করেন তার আওতায় বাংলাদেশ ১৯৯৮ সাল থেকে মার্কিন নিরাপত্তা সহযোগিতা পেয়ে আসছে।

কিন্তু ২০২২ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে নিরাপত্তা ইউনিট দ্বারা মানবাধিকার লংঘনের ওপর নিষেধাজ্ঞা মেনে চলা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে ‘লেহি ল’ তে সাহায্য নিচ্ছে এমন দেশের সরকারসমূহের সাথে লিখিত চুক্তির শর্ত যোগ করে।

মার্কিন কর্মকর্তা আরো বলেন, বিদেশি সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম বৃহত্তম সহায়তাকারী দেশ যেখানে বাংলাদেশ তাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা অংশীদারদের মধ্যে অন্যতম।

আরেক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ কিংবা অন্যদেশ যার সাথেই যুক্তরাষ্ট্র কাজ করুক ওয়াশিংটন নিশ্চিত করতে চায় মাকিন নীতি ও আইন অনুসারেই তাদের সাহায্য বিশেষ করে মানবাধিকারের কাজে ব্যবহৃত হোক। লেহি আইন এ বিষয়টি নিশ্চত করছে।

ঢাকার জবাব

এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের আইন মন্ত্রণালয় সংশোধিত আইন ও এর প্রভাব খতিয়ে দেখছে। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, যাচাই বাছাই শেষে ঢাকা এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, এ বিষয়ে কূটনৈতিক মাধ্যমে আলোচনা চলছে কারণ ঢাকার সাথে ওয়াশিংটনের দুর্দান্ত কাজের সম্পর্ক রয়েছে।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা ব্যাখ্যা করে বলেন, বিশ্বব্যাপী লেহি আইনের শর্ত পহেলা জানুয়ারি থেকে কার্যকর হলেও বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত মার্কিন নিরাপত্তা সহযোগিতার প্রভাব পড়েনি।

তবে, তিনি বলেন, মার্কিন কংগ্রেস আইন তৈরি করে এবং নির্বাহী শাখা তা অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করে। যদিও লেহি আইনে নতুন নীতি খুবই ছোট এবং সকীর্ণ তবু ঢাকা মার্কিন নিরাপত্তা সহায়তার জন্যে একটি লিখিত সম্মতি বেছে নিতে পারে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও লেহি আইন

মার্কিন কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে বলেন, বাংলাদেশে অপরাধ দমন কাজে নিয়োজত এলিট বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটেলিয়ান(র‌্যাব)-এর কিছু সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে লেহি আইনের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই এবং এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন।

যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লংঘন বিষয়ক গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস এন্ড অ্যাকাউন্টিবিলিটির আওতায় গত ১০ ডিসেম্বর বর্তমান ও সাবেক কিছু র‌্যাব কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, লেহি আইন নিষেধাজ্ঞা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। লেহি আইন প্রতিরোধমূলক আর নিষেধাজ্ঞা মানবাধিকার লংঘনকারীদের আটকে দেয়।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন