গ্যাস সংকটে বিপর্যস্ত নাগরিক জীবন

1274
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

রাজধানীর বাসাবাড়িতে চলছে চরম গ্যাস সংকট। প্রতিবছর শীত এলেই মিরপুর, বাসাবো, রামপুরাসহ ঢাকার আশপাশের এলাকার মানুষের দুর্ভোগের যেন সীমা থাকে না। সেবা না পেয়েও প্রতি মাসে গ্যাস বিল দেওয়াসহ বিকল্প জ্বালানির জন্য গুনতে হচ্ছে বাড়তি খরচ; যা মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংকটের বিষয়ে জানতে তিতাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

কিছুক্ষণ পর পর রান্না ঘরে উঁকি দেওয়া যেন নগরবাসীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কখন গ্যাস আসবে, এ নিয়ে সবার কপালে চিন্তার ভাঁজ। সাধারণত সকালবেলা কর্মজীবীদের কাজে যাওয়ার তাড়া থাকে। কমবেশি সবাই ঘর থেকেই নাস্তাটা করে বের হন। অনেকে আবার দুপুরের খাবারটাও বাসা থেকে আনেন। তবে গ্যাস সংকট সবকিছুর রুটিনই এলোমেলো করে দিয়েছে।

রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা রেশমা বেগম। স্বামী-সন্তানের জন্য সকালের খাবার প্রস্তুত করতে সব আয়োজন নিয়ে বসে আছেন। কিন্তু গ্যাস সংকটে চুলা জ্বালাতে না পেরে চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ। এ যুদ্ধ এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, বাবুর আব্বু তো না খেয়ে অফিসে চলে গেছে। বাচ্চাদের এখনও খাবার দিতে পারিনি।

রান্না করতে না পেরে বাধ্য হয়ে প্রায়ই অলিগলির দোকান থেকে খাবার আনতে হয়। টানাটানির সংসারে এ যেন বাড়তি বিড়ম্বনা। রেশমার মতো ভোগান্তির শিকার রাজধানীর খিলগাঁও, বনশ্রী, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী, উত্তরাসহ বেশির ভাগ এলাকার মানুষ।

স্থানীয় এক নারী বলেন, রান্না করতে কষ্ট হয়ে যায়। গ্যাস নাই কীভাবে রান্না করব?

আরেক নারী বলেন, আজকে রান্না করে পরের দিন গরম করে খাওয়া হয়। অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়।

গ্যাস সংকট উঁচু তলার মানুষের জীবনেও অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নষ্ট করেছে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ।

এক নারী বলেন, সারাদিন গ্যাস থাকে না। আমাদের রান্না-নাস্তা কিছুই তৈরি করতে পারি না।

এক তরুণ বলেন, হোটেলে খেতে হয়। হোটেলে খেতে খেতে অলরেডি অসুস্থ হয়ে গেছি।

গ্যাসের অভাব নগরবাসীর ঘুম হারাম করলেও কুম্ভকর্ণের ঘুমে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস। সংকট সমাধানের বিষয়ে জানতে একাধিকবার চেষ্টা করেও এমডির বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিতাসের ভুলের খেসারত দিচ্ছে সাধারণ মানুষ।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, বর্তমানে যে বড় আকারের সংকট দেখা দিয়েছে, এটার কারণ মূলত গ্যাসের স্থানীয় উৎপাদন কমে যাওয়া। অন্যদিকে এলএনজি সরবরাহটাও কমে যাওয়া।

উৎপাদন না বাড়ালে ভবিষ্যতে গ্যাস সংকট আরও বাড়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন