থামছে না অবৈধ পথে ইউরোপ-যাত্রা

1508
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

কোন ভাবেই যেনো থামানো যাচ্ছে না অবৈধ পথে ইউরোপ যাত্রা। উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত অনেক দেশ থেকে প্রতি বছর হাজারো মানুষ ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান। এর একটি বড় অংশের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশ নামক মরীচিকায় বিভোর হয়ে কোনো কিছু চিন্তা না করেই ছুটে যান অজানার উদ্দেশে।

বিশেষত, অবৈধ পথে এই ইউরোপে যেতে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মাঝে-মধ্যেই প্রাণহানি ঘটছে বাংলাদেশিদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় বেপরোয়া মানবপাচারকারীরা। গত ২৫ জানুয়ারি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাত্রা করতে গিয়ে মৃত্যু হয় ৭ বাংলাদেশির। মানবপাচারকারীদের হাতে লাখ লাখ টাকা দিয়েও এখন মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনেরা।

অবৈধপথে ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর এমন ঘটনা ঘটছে মাঝে-মধ্যেই। গত বছরের মে মাসেও মানবপাচারকারীদের গুলিতে প্রাণ হারাতে হয় ২৬ জনকে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, মনিটরিং না থাকায় বাংলাদেশিদেরকেই টার্গেট করছে মানবপাচারকারীরা।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) হিসাবে, ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টায় গত বছরের মার্চ-এপ্রিলে ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি অবস্থান নেয় লিবিয়ায়। যেখানে যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশ সিরিয়ার অভিবাসীর সংখ্যা ছিলো ২১ হাজার।

এছাড়া জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচএসিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ইউরোপে অবৈধ পথে প্রবেশ করেছেন ৪৭ হাজার ৪২৫ অভিবাসনপ্রত্যাশী। এর মধ্যে ৪৪ হাজার ৯৩জন এসেছেন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে৷ যা মোট অভিবাসনপ্রত্যাশীর ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ, অর্থাৎ তিন হাজার ৩৩২জন বাংলাদেশি।

এদিকে লিবিয়ায় বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারে ১৮টি রুট ব্যবহার হয়ে থাকে। আইওএম বলছে মূল রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে আবুধা্বি এবং দুবাই। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে ভিজিট ভিসার ক্ষেত্রে মনিটরিং না থাকায় পাচারকারীরা টার্গেট করছে বাংলাদেশিদের।

এবিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলছেন, মানবপাচারকারীদের এ চক্র সরকারের একার পক্ষে দমন করা সম্ভব নয়। এদিকে অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানবপাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা না হওয়ায় বেড়েই চলেছে এ ধরনের ঘটনা।

বাংলাদেশের তিনটি অঞ্চলকে ইউরোপগামী অভিবাসন-প্রবণ বলে চিহ্নিত করেছে ব্র্যাক, জানান শরিফুল হাসান। সিলেট বেল্ট, যার মধ্যে রয়েছে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার। তারপর রয়েছে ফরিদপুর বেল্ট, যেখানে রয়েছে ফরিদপুর, মাদারীপুর ও শরিয়তপুর এবং সবশেষে রয়েছে মধ্য ঢাকার বেল্ট যার মধ্যে রয়েছে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ ইত্যাদি অঞ্চল। মূলত এই তিনটি অঞ্চল থেকেই ইউরোপগামী বাংলাদেশিদের ঢল এসে থাকে।

ইউরোপের স্বপ্নালু জীবনের টান, পারিপার্শ্বিক সমাজের চাপ ও সাফল্যের প্রত্যাশাই বাংলাদেশিদের ঠেলে দিচ্ছে অবৈধ পথে ইউরোপে পাড়ি দিতে। এর মধ্যে অনেকেই দেশে ফিরে আসতে চান না লোকলজ্জার ভয়ে বা টাকা লোকসানের হিসাব করে।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন