ওমিক্রনসহ মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকারের আরোপ করা বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে আরও কঠোর হওয়ার কথা জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারি বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের চলমান অভিযান আরও জোরদার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও এর আগে সরকারি নির্দেশনা মেনে অর্ধেক জনবল দিয়ে কাজ করিয়েছে। এবারও তারা নিজ দায়িত্বে করবে বলে আশা করি। সরকারের প্রধান লক্ষ্য করোনা সংক্রমণ কমিয়ে আনা।
দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারি-বেসরকারি অফিস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা নিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার।
সরকারি-বেসরকারি অফিসে অর্ধেকের বেশি জনবল কাজ করতে পারবে না। সশরীরে অর্ধেক বাকিরা বাসায় বসে অনলাইনের মাধ্যমে কাজ করবেন। সোমবার (২৪ জানুয়ারি) থেকে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া ২১ জানুয়ারি থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
এদিকে গত ১০ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, যা কার্যকর হয় ১৩ জানুয়ারি থেকে।
নির্দেশনাগুলো হলো
১. দোকান, শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলক সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
২. অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারা দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।
৩. রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনার টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।
৪. ১২ বছরের বেশি বয়সী সব শিক্ষার্থীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
৫. স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পোর্টগুলোতে ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতেও আগত ট্রাকের সঙ্গে শুধু ড্রাইভার থাকতে পারবে। কোনো সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
৬. ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেওয়া যাবে (পরে অবশ্য গণপরিবহনে আসনের সমান সংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়)। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সর্ব প্রকার যানের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকা সনদধারী হতে হবে।
৭. বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।
৮. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরার বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
৯. সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে তারা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা গ্রহণ করবে।
১০. উন্মুক্ত স্থানে সর্ব সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।
১১. কোনো এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
তবে সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের ১১ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মাঠের চিত্র ছিল একেবারে ভিন্ন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের চিত্রটা অনেক ভিন্ন।
আরও পড়ুন: মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলবে যেভাবে
নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার ব্যস্ততায় অতি প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী মাস্ক আনতেই বেমালুম ভুলে গেছেন অনেকেই। আবার যাদের সঙ্গে আছে তারাও মাস্ক পরেননি সঠিকভাবে।
সড়ক কিংবা দোকানপাটের চিত্রও প্রায় একই। সর্বত্রই যেন মাস্ক পরায় চরম অনীহা। নির্দেশনার নিয়ম অমান্যকারীকে আইনের আওতায় আনার কথা বলা হলেও মাঠে নেই সরকারের সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য সবাই মাস্ক পরুক। মাস্ক ছাড়া বের হলে এখন থেকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে। সবাইকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। গ্রামে মাইকিং করে টিকা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। এই সময়টা আমরা অতিক্রম করতে চাই।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ এটি (করোনার সংক্রমণ) বাড়তে থাকবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরা চাই, এই তৃতীয় ঢেউ থেকে যত তাড়াতাড়ি উত্তোরণ করতে পারি। সেজন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলা করতে হবে।