লন্ডনের একটি হাসপাতালে বিএনপিনেতা আবুল হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন বলে জানা গেছে। প্রায় তিন মাস আগে তাঁর মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছে পারিবারিক একটি সূত্র।
হারিছ চৌধুরীর ছোট ভাই কামাল চৌধুরীর শ্যালক মইনুল হক বুলবুল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হারিছ চৌধুরী সাহেব তিন মাস আগে লন্ডনে মারা গেছেন। নানা কারণে পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর মৃত্যুর খবরটি প্রকাশ করা হয়নি।’
মইনুল হক বুলবুল জানান, গত অক্টোবরে হারিছ চৌধুরী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর মারা যাওয়ার সংবাদ দেশে-বিদেশে অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজনদের গোপন রাখতে বলা হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। এজন্য কেউ বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেনি।
মইনুল হক বুলবুল বলেন, ‘করোনা থেকে সুস্থ হলেও করোনা পরবর্তী বেশকিছু শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন হারিছ চৌধুরী। এ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে তাঁর ফুসফুসে ভয়াবহ সংক্রমণ হয়েছে। এ কারণে তিনি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা হয়নি।’
এদিকে, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা জেনেছি, হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন।’ তিনি বলেন, ‘একটা মানুষ মারা গেছেন, সে তথ্যও আমরা প্রকাশ করতে পারছি না। তিন মাস আগে তিনি মারা গেলেন, আর এখনও সেটা প্রকাশ করতে ভয় পেতে হচ্ছে পরিবারকে।’
অন্যদিকে, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, ‘আমিও শুনেছি, তিনি মারা গেছেন। এর চেয়ে বেশি তথ্য আমার কাছে নেই।’
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর—হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই সিলেট জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশিক চৌধুরী গতকাল ফেসবুকে একটি ইঙ্গিতপূর্ণ স্ট্যাটাস দিলে ঘটনার জানাজানি হয়। এরপর গণমাধ্যমে উঠে আসে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর। তবে, কেন সংবাদটি গোপন রাখা হয়েছিল, তা জানাননি কেউ। আশিক চৌধুরীর ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লেখা ছিল—‘ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন’। হারিছ চৌধুরীর একটি ছবি যুক্ত করে আশিক এ স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসের নিচে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ‘ইন্না লিল্লাহি … রাজিউন’ লিখে কমেন্ট দিতে থাকেন।
এ বিষয়ে জানতে আশিক চৌধুরীর মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
হারিছ চৌধুরী গত বছর আগস্টে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হন। তবে, করোনায় ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ায় আবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। এর আগে থেকেই ব্লাড ক্যানসারসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছিলেন।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজা হয় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হারিছ চৌধুরীর সাত বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়।
এ ছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় হারিছ চৌধুরী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। হারিছ চৌধুরী স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে যুক্তরাজ্যে থাকতেন।