নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ এর অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেই তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত শেষ করে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন। ২২ ডিসেম্বর বুধবার সকালে রাজধানীর প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আজিম উদ্দিন, এমএ কাসেম, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, বেনজীর আহমেদসহ বোর্ড অব ট্রাস্টির সিন্ডিকেটের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে তাদেরকে অব্যাহতি প্রদান, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আইন ও সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের লিখিত অভিযোগ, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরসহ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টিদের বিরুদ্ধে জমে থাকা এক গাদা অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে দুদক। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে নর্থ সাউথ কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন নথিপত্র চাওয়া হয়েছে। এই কার্যক্রমে যেন কোনোমতেই কালক্ষেপন করা না হয়- এমন দাবি জানিয়ে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন অভিযুক্তরা অনেক বেশি শক্তিশালী। তারা অনেকটা প্রকাশ্যেই পেশীর জোর দেখিয়ে দাবিয়ে বেড়াচ্ছেন। অবৈধ অর্থের জোরে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানানো হয়। এর আগে একাধিকবার ইউজিসির তদন্তদল নর্থ সাউথের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু কী এক অদৃশ্য খুঁটির জোরে নর্থ সাউথের দুর্নীতিবাজ ট্রাস্টিরা বারবার থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। নর্থ সাউথের মতো একটি প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের ভয়াল থাবা থেকে বাঁচাতে এবার যেন কোনো মতেই ছাড় দেয়া না হয়, বক্তারা সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এমন দাবি তুলে ধরেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতির মূল হোতা আজিম-কাসেম সিন্ডিকেটের এমএ কাসেমকে তারেক জিয়ার স্বঘোষিত পিতা ঘোষণা করে তারেক রহমানের সঙ্গে তার গোপন আঁতাতের অভিযোগ তুলে ধরা হয়। এর প্রমাণস্বরূপ তারেক রহমানের সঙ্গে এমএ কাসেমের ঘনিষ্ঠতার বিভিন্ন স্থিরচিত্র উপস্থাপন করা হয়। এই এমএ কাসেমসহ আজিম উদ্দিন, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, বেনজীর আহমেদ সিন্ডিকেটের আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং জঙ্গিবাদী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত দ্রুত শেষ করা ও তাদের বিচারের আওতায় এনে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান বক্তারা। প্রভাবশালী এই সদস্যরা যেন অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রমে কোনো প্রকার প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন, সেজন্য অভিযুক্তদের সরিয়ে ট্রাস্টিবোর্ড পুনর্গঠন এবং তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞারও দাবি জানান তারা।
উল্লেখ্য নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আজিম-কাসেম সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রয়েছে এক গাঁদা অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কম মূল্যের জমি বেশি দামে ক্রয়, ডেভলাপার্স কোম্পানি থেকে কমিশন নেয়া, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয়, এক লাখ টাকা করে সিটিং এলাউন্স, অনলাইনে মিটিং করেও সমপরিমাণ এলাউন্স গ্রহণ, নিয়ম ভেঙ্গে ফান্ডের কোটি কোটি টাকা নিজেদের মালিকানাধীন ব্যাংকে এফডিআর, মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করে কয়েকগুণ শিক্ষার্থী ভর্তি, অতিরিক্ত বিভাগ খোলা, হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি নাফিস ইমতিয়াজকে পুনরায় ভর্তি করে জঙ্গি আতঙ্ক তৈরিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন আইন ও মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. সুফী সাগর সামস, বাংলাদেশ সংবাদপত্র (গণমাধ্যম) কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান তালুকদার, বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান এম ইব্রাহিম পাটোয়ারি, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফেডারেশন এর সভাপতি বিদ্যুৎ বিশ্বাস, মানবাধিকারকর্মী এম ইদ্রিস, সাংবাদিক নেতা কালিমুল্লা ইকবালসহ আরো অনেকে। মানববন্ধনে মানবাধিকারকর্মী, ছাত্র-অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।