সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই; জনগণ জেগে উঠলে আওয়ামী লীগ পালানোর পথও পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ শুক্রবার জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
এ ছাড়া ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা, পাতিনেতাদের দৌরাত্ম্যে এখন আর কেউ থাকতে পারে না’ বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “শরীয়তপুরের এমপি বলছেন, ‘আমি ঠিক করে দেব, কে চেয়ারম্যান হবে আর কে মেম্বার হবে। অন্য কেউ দাঁড়াতে পারবে না।’ আমরা চিন্তাই করতে পারি না! ১৯৭১ সালে আমরা যে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছিলাম, সে গণতন্ত্রকে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিয়ে তারা এখন একটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে। এরা ভিন্নমত সহ্য করতে পারে না। কারও সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। সহনশীলতা বলতে তাদের কিচ্ছু নাই।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আওয়ামী লীগ যে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছে, সেটার প্রতিবাদে আমরা একটা একটা আলোচনা সভা করেছিলাম আমাদের অফিসের সামনে। তারপর সভার শেষে আমাদের ছেলেরা যখন ফিরে যাচ্ছিল, তখন তাদের পেছন থেকে আক্রমণ করে, টিয়ার শেল মেরে, গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে। আহত করা হয়েছে প্রায় পঞ্চাশের বেশি মানুষকে। উল্টো তারা আবার মামলা দিয়েছে এক হাজার ৬০০ জনের বিরুদ্ধে। এত ভয় পায় কেন? ভয় পায় এজন্য যে—তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। জনগণ যেদিন বের হবে রাজপথে, সেদিন আপনারা পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না।’
পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা এ দেশের সন্তান। আপনারা মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান করবেন না। আপনারা রাষ্ট্রের একটা দলের সঙ্গে মিশে জনগণের ওপর এভাবে নির্যাতন করবেন না। এ সরকার আজ রাষ্ট্রের-জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। জনগণের পকেট কেটে আওয়ামী লীগ নিজেদের পকেট ভারী করছে।’
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আপনারা সংগঠিত হোন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যেন একটি দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারি। আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই। তবে, সে নির্বাচন হতে হবে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।’
প্রেসক্লাবে অপর এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভালো আছেন। গতকাল ম্যাডামকে দেখতে গিয়েছিলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি এখন ভালো আছেন। সবাই দোয়া করবেন, তিনি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে আমাদের মধে ফিরে আসতে পারেন। তিনি যেন মুক্ত হয়ে ফিরে আসতে পারেন।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনেকেই লিখতে পারি না। আমি লেখা ভুলে গেছি। রাজনীতির ঝামেলায় সব ভুলে গেছি। যখন জেলে ছিলাম, তখন কিছু লেখার চেষ্টা করেছিলাম। পরে এসে দেখি—ওটা এখন লেখা যাবে না, প্রকাশ করা যাবে না। প্রকাশ করতে গেলে এখন যতটুকু হাঁটাহাঁটি করছি, সেটাও করতে পারব না।’
‘বর্তমানে বাংলাদেশে একটি অস্বাভাবিক ও বিকৃত অবস্থা বিরাজ করছে। সবার আগে আওয়ামী লীগের বিচার হবে এজন্য যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রটাকে তারা একটি বিকলাঙ্গ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। সমস্ত অর্জনকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী আমাদের যে সংসদ, সে সংসদ তারা শেষ করে দিয়েছে। আমাদের যে বিচার ব্যবস্থা, সে বিচার ব্যবস্থাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রশাসনকে তারা পুরোপুরিভাবে দলীয়করণ করেছে। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে আওয়ামী লীগের গণমাধ্যমে পরিণত করেছে’, বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।
এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, “এটা আওয়ামী লীগের চরিত্রের পুরোনো ইতিহাস। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত একইভাবে তারা দেশ পরিচালনা করেছে। শেষ পর্যন্ত ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠা করেছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা এটা এড়িয়ে যান। তাঁরা গণতন্ত্রের কথা বলেন, এটা (বাকশাল) জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেন না।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এ সরকার অবৈধ; জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। এরা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। আমরা এ নির্বাচন মানি না। এ দেশের মালিক জনগণ। তারা একটি দিন পায়—যে দিনে তারা নিজেদের কথাটা, অধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সেটা হচ্ছে—নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। আওয়ামী লীগ সে অধিকারটাও কেড়ে নিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে।’