আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন নিয়ে দলের অভ্যন্তরে কাঁদা ছোড়াছুড়ির দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ইউপি নির্বাচনে কী যে অবস্থা! যার সাথে যার বনে না, তাকে বলে রাজাকারের ছেলে, অথবা রাজাকারের নাতি, অথবা নাতির ঘরে, বা শান্তি কমিটির মেম্বার ছিল নানা। এসব অভিযোগ স্তূপ হয়ে গেছে পার্টি অফিস।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘করোনাকালীন শিল্প ও বাণিজ্য উন্নয়নে জননেত্রী শেখ হাসিনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা সবই অনুসন্ধান করি এবং প্রকৃত লোকদেরই মনোনয়ন দেওয়ার চেষ্টা করি। এর মধ্যেও কিছু ভুল হয়। আমরাও মানুষ। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, আমাদের কিছু নেতা জনগণের চেয়ে নিজের লাভ খোঁজে। একজন প্রতিনিধি, একটা কনস্টিটিউন্সির ১৩টা তাঁকে দেওয়া হলো। একটা কেন দেওয়া হলো না? অভিযোগ এলো শান্তি কমিটির মেম্বারের ছেলে। …যুক্তিসঙ্গত হলে সেটি আমরা দেখি। আজকে এই বিষয়গুলো বড়ই বেদনার।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ব্যবসায়ীরা রাজনীতি করতে পারেন। তবে রাজনীতি নিয়ে ব্যবসা ঘৃণা করি। রাজনীতিকে যখন ব্যবসার হাতিয়ার করা হয়, সেটা তখন রাজনীতিও থাকে না, ব্যবসাও থাকে না। এ দেশে ব্যবসা না করেও রাজনীতিবিদ হয়ে ব্যবসায়ী হয়ে যান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নিজের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য রাজনীতি করি না, দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে রাজনীতি করি। এই করোনাকালে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন তিনি নিজের জন্য নয়, দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে রাজনীতি করেন। শেখ হাসিনার ট্রু ফলোয়ার হলে দেশ সোনার দেশ হবে।
ভ্যাকসিন সংগ্রহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পলিসি এবং দক্ষতা সারা দুনিয়ায় প্রশংসিত হয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি শুধু বাংলাদেশে প্রশংসিত প্রধানমন্ত্রী নন, বিশ্বের প্রশংসিত প্রধানমন্ত্রী। একজন রাজনীতিবিদ পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে ভাবে, আর শেখ হাসিনা পরবর্তী জেনারেশন নিয়ে ভাবেন।
এ সময় দেশের অবকাঠামোখাতে আওয়ামী লীগের সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী বলেন, ১৩ বছর আগে কী ছিল বাংলাদেশ? আজ বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন শেখ হাসিনা তাঁর ম্যাজিক্যাল লিডারশিপ দিয়ে। আজকে পাহাড়েও রাস্তাঘাটের চেহারা পাল্টে গেছে। আগামী বছর মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের প্রবৃদ্ধি আরো বাড়বে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
দেশের ছোট ছোট বিষয় থেকে শুরু করে বড় বিষয়গুলো শেখ হাসিনা ধৈর্য ধরে সিদ্ধান্ত দেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এতো পরিশ্রম উনি কিভাবে করেন তা আমি মাঝেমধ্যে ভেবে পাই না। বাংলাদেশের মানুষের জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সেজন্য নিউইয়র্ক টাইমস বলে, দারিদ্র্য বিমোচন করতে হলে বাংলাদেশের দিকে তাকাও।
সাম্প্রদায়িক হামলার নেপথ্যে কারা জড়িত সেই ঘটনায় ‘থলের বিড়াল বেরিয়ে আসছে’ বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সম্প্রতি সময়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরে হামলার বিষয়টি তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের উন্নয়নে এই সাম্প্রদায়িক শক্তি বাধা তৈরি করছে। গত ১২ বছরে কোনো ঘটনা ঘটল না কিন্তু এবার নির্বাচনে সামনে রেখে এই ধরনের ঘটনা ঘটল।
‘ওই ঘটনায় থলের বিড়াল বেড়িয়ে পড়ছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি যারা একাত্তরে বাংলাদেশ চায়নি, তারা আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র করছে। তারা আবারো আগুন সন্ত্রাস, ককটেল আর পেট্রল বোমা নিয়ে ভাবছে। ছক বানাচ্ছে, নীলনকশা করতে যাচ্ছে; এভাবে তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে। এই সাম্প্রদায়িক শক্তির নির্ভরযোগ্য ঠিকানা হচ্ছে বিএনপি। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে এই দলটি।’ সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য উপকমিটির আয়োজনে সভায় সভাপতিত্ব করেন উপকমিটির চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম আহমেদ। উপকমিটির সদস্য সচিব এবং আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমানের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও ডি-৮ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডি-৮ সিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম প্রমুখ।