যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনেই তালেবানের সংগে যুক্তরাষ্ট্র শান্তি চুক্তি করেছিলো বলে জানিয়েছেন আফগানিস্তান-বিষয়ক মার্কিন সাবেক বিশেষ দূত জালমে খলিলজাদ। তাঁর মধ্যস্থতাতেই কাতারের রাজধানী দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সংগে আলোচনায় বসেছিলো তালেবান।
সিবিএস নিউজ-এর সংগে আলাপকালে জালমে খলিলজাদ বলেন, মার্কিন সামরিক বাহিনী অনেকবার আফগান যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
খলিলজাদ বলেছেন, ‘আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) যুদ্ধে জিততে যাচ্ছি না, এমন বিচার-বিবেচনার ফলই তালেবানের সংগে সমঝোতা আলোচনা। সময় আমাদের পক্ষে ছিলো না। তাই দেরি করার চেয়ে আগেই তালেবানের সংগে চুক্তি করা উত্তম ছিলো।
তালেবানের অগ্রযাত্রার মুখে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিকে দায়ী করেছেন তিনি। তিনি বলেন, গনি পালিয়ে যাওয়ায় দেশটিতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। তালেবান ক্ষমতা ভাগাভাগির মাধ্যমে সরকার গঠন এবং পরবর্তী সরকারে গণি প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাদের রাখা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংগে আলোচনা করছিলো। কিন্তু আশরাফ ঘানি পালিয়ে যাওয়ায় এর সবকিছুই ভেস্তে যায়।
সাবেক এই মার্কিন বিশেষ দূত বলেন, আশরাফ ঘানি বলেছেন, রক্তপাত এড়াতে তিনি পালিয়ে যান। তাহলে তিনি আগে পদত্যাগ করলেন না কেন। তিনি যদি সেটা করতেন, তাহলে আফগানিস্তানে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার হতো।
তিনি বলেন, যে আল কায়েদাকে দমনে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে গিয়েছিলো সেটি অনেকাংশে সফল হয়েছে। কিন্তু সেখানে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরিতে ওয়াশিংটন ব্যর্থ হয়েছে।
প্রবীণ এই কূটনীতিক বলেন, দুই দশকের মার্কিন উপস্থিতি আফগানিস্তানকে বদলে দিয়েছে। ১৯৯০-এর দশকে তালেবান আফগানদের যে জায়গায় রেখেছিল এখন নাগরিকদের সেই জায়গায় ফিরিয়ে নিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
গত ১৫ আগস্ট তালেবানের হাতে কাবুলের পতন হয়। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে যেভাবে বিদায় নিতে হয়েছে, তাকে দেশটির স্মরণকালের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হয়। এই ব্যর্থতার জন্য নিজ দেশে সমালোচনার মুখে পড়েন জালমে খলিলজাদ। অভিযোগ উঠে, মধ্যস্থতায় তালেবানকে অধিক পরিমাণে ছাড় দিয়েছেন তিনি। সমালোচনার মুখে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
তিন বছর ধরে আফগানিস্তান-বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূতের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। কাবুলের পতনের দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে খলিলজাদ বিদায় নেন।