বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে বলেছিল, আজ সেই চালের কেজি ৭০ টাকা। লবণ-চিনির দাম বেড়েছে। পেঁয়াজ-মরিচসহ এমন একটা জিনিস নেই যার দাম বাড়েনি।
শুক্রবার (২২ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ লেবার পার্টির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়লেও মানুষের আয় কিন্তু বাড়েনি। গরিব মানুষ আরও গরিব হয়েছে, আওয়ামী লীগের লুটেরা যারা, তারা ধনী থেকে আরও ধনী হয়েছে। দুর্নীতি এমন একটা অবস্থায় পৌঁছেছে যা এখন দেশের সিস্টেম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে যাবেন দুর্নীতি, ছাত্র ভর্তি থেকে শুরু করে হাসপাতাল বা বিচারালয় সবখানেই দুর্নীতি। আজ দুর্নীতি পুরো সমাজকে নষ্ট করে ফেলেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের পরে ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে যখন ক্ষমতা পেয়েছিলেন তখন তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন এবং সংবিধানে সেটা সংযোজন করেছিলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য- স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে বহুদলীয় গণতন্ত্র আজ নষ্টের পথে। বর্তমানে একটা গণতন্ত্রের মোড়ক লাগিয়ে একদলীয় শাসন কায়েম করার সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আমাদের দুঃখের জায়গা- আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করছি। কিন্তু গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভগুলো আমরা শক্তিশালী করতে পারিনি। আজ এই ফ্যাসিস্ট সরকার, যাদের জনগণের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, যারা বিনা নির্বাচনে বন্ধুক দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র দখল করে রেখেছে। এটা আমাদের চরম ব্যর্থতা। আমরা এখনও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করতে পারিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের এই পলিটিকাল সিস্টেমের পরিবর্তন করতে হবে, এটাকে গণতন্ত্রের দিকে ফিরিয়ে আনতে হবে। ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক শক্তির লড়াই সহজ কাজ নয়। পৃথিবীতে এমন শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, প্রাণ দিতে হয়েছে, সম্পত্তির ক্ষয় হয়েছে। মানুষ তার নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
সরকার আগেও মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে; কখনো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিপক্ষ শক্তি, গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি বিপক্ষের শক্তি ইত্যাদি বলে। এখন ধর্মীয় বিভাজনের মাধ্যমে চেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে মানুষের মনোযোগ মূল সমস্যা থেকে অন্যদিকে নেওয়া যায়। আমাদের সমস্যা দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে, আমরা ভোট দিতে পারি না, আমরা কথা বলতে পারি না, আমাদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে, শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তারা এখন আমাদের এসব বিষয় থেকে মুখ ঘুরিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন আমাদের একটাই কাজ হওয়া উচিত- জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারকে সরানোর ব্যবস্থা করা। এছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই। সরকার হাজার চেষ্টা করেও আমাদের মাঝে ফাটল ধরাতে পারেনি।
সরকারকে কেউ চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, পত্রপত্রিকা বলেন আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলেন; শিক্ষার্থী, শিক্ষক, শ্রমজীবী সবাই বলেন, এই সরকার কখন যাবে? কারণ তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে- রাজনীতিকভাবে তাদের একতাবদ্ধ করে এই সরকারের বিদায় নিশ্চিত করা।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ২০ দলীয় জোটের নজরুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ আরও অনেকে।