বাঁচা-মরার লড়াইয়ে স্বপ্নটা বাঁচিয়ে রাখল টাইগাররা। ১৫৪ রানের টার্গেট দেওয়া বাংলাদেশের বোলিং-ফিল্ডিং দেখে একটা সময় মনে হচ্ছিল এই বুঝি ফিকে হতে চলেছে টাইগারদের স্বপ্ন। বোলিংয়ে একের পর এক ওয়াইড, ক্যাচ মিস, রান আউটের সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় হতাশার ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে সবার চোখে-মুখে। কিন্তু ম্যাচের বয়স বাড়ার সাথে সাথে চিত্রপট পাল্টাতে শুরু করে। ১৫৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৭ রানে থামে ওমান। ফলে ২৬ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা।
১৫৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরু থেকেই বলের সঙ্গে গতি রেখেই রান তুলছিল ওমানের ব্যাটসম্যানরা। নিজের প্রথম ওভারে বোলিংয়ে এসেই উইকেটের দেখা পান কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। আকিব ইলিয়াসকে ফিরিয়ে দলের হয়ে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন ওমানের এই ওপেনারকে। তিনি ফিরে যান ৬ বলে ৬ রান করে।
এরপর কাশাব প্রজাপতিকে ফিরিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো উল্লাস করেন মুস্তাফিজ। ফিরে যাওয়ার আগে কাশাব প্রজাপতি করেন ১৮ বলে ২১ রান।
এরপর এক ওভারে দুটি সুযোগ এলেও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। প্রথমে রান আউটের সুযোগ নষ্ট করেন সাইফউদ্দিন। সাকিবের থ্রো নন-স্ট্রাইক প্রান্তে ঠিকঠাক ধরতে পারেননি তিনি। যতীন্দর সিং ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন কিন্তু শর্ট থার্ডম্যানে ঝাঁপিয়ে পড়েও তা তালুবন্দী করতে পারেননি মুস্তাফিজ। এরপর যতীন্দরের আরেকটি সহজ ক্যাচ মিস করেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও।
লাইফ পেয়ে যতীন্দর সিং এবং অধিনায়ক জিসান মাকসুদ মিলে এগিয়ে নিচ্ছিলেন দলের রান। তবে তাতে বাধা হয়ে এলেন স্পিনার মেহেদী হাসান। দু’জনের ৩৪ রানের জুটি ভাঙেন মেহেদী। এরপর ভালোই খেলতে থাকা যতীন্দরকে ফেরান সাকিব। তিনি ফিরে গেছেন ৩৩ বলে ৪০ রান করে।
এই জুটির পর আর তেমন কেউই উইকেটে থিতু হতে পারেননি। বোলিংয়ে এসে আঘাত হানেন সাইফউদ্দিন। স্বন্দ্বীপ গোউদকে মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান তিনি। এরপর পরপর দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন সাকিব। নাসিম খুশি এবং আয়ান খানকে ফেরান তিনি। দুটি ক্যাচই নিয়েছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। শেষ দিকে মোহাম্মদ নাদিম অপরাজিত থাকেন ১২ বলে ১৪ রান করে। এছাড়া আর তেমন কেউই দুই অঙ্কের ঘর পেরোতে পারেননি। ফলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১২৭ রানে থেমে যায় ওমানের ইনিংস।
বাংলাদেশের হয়ে মুস্তাফিজ নিয়েছেন ৪টি উইকেট। এছাড়া সাকিব নিয়েছেন ৩টি উইকেট।
এর আগে বাঁচা-মরার লড়াই আর নানা সমীকরণের ম্যাচে স্বাগতিক ওমানের বিপক্ষে ১৫৩ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৫৩ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা।
ব্যক্তিগত ৪ রানে প্রাণ ফিরে পান লিটন দাস। তবে সুযোগ পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। বিলাল খানের বলে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। তবে সেটি ধরতে ব্যর্থ হন কাশাপ প্রজাপতি। এরপরই বিদায়ঘণ্টা বাজে তার। বিলাল খানের দুর্দান্ত ইর্য়কারে পরাস্ত হন লিটন। ফিরে যান ৬ রান করে।
লিটনের পর একই পথে হাঁটেন মেহেদী হাসানও। ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করে তিন নম্বরে নামেন মেহেদী হাসান। কিন্তু তাতেও নড়বড়ে বাংলাদেশ। শুরুর চাপ তো দূরের কথা, উল্টো দলকে বিপদেই ফেলে গেলেন তিনি। ফায়াজ বাটের দুর্দান্ত ফিরতি ক্যাচে ফিরে যান মেহেদী। নিজের বলে বাঁ-দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন ফায়াজ। ৩ বল খেলে শূন্য রানে ফিরেছেন মেহেদী।
তবে ব্যতিক্রম ছিলেন সাকিব-নাঈম। ওমানের বোলারদের চোখ রাঙানি সামলে এগিয়ে নেন বাংলাদেশকে। প্রতিপক্ষ বোলারদের নিখুঁত লাইন-লেন্থ আর স্যুইংয়ে যখন পরাস্ত বাংলাদেশ তখন দেখে-শুনে এগোতে থাকেন এ দু’জন। গড়েন অর্ধশত রানের পার্টনারশিপ। শুরুতে খোলসবন্দী থাকলেও ধীরে ধীরে শট খেলেন তারা। তবে অর্ধশত রানের দিকে ছুটতে থাকা সাকিব ফিরে গেছেন দুর্ভাগ্যজনকভাবে রানআউট হয়ে। ২৯ বলে ৪২ রান করে রানআউটে কাটা পড়েন তিনি।
ফিফটি তুলে নেন ওপেনার নাঈম শেখ। তার ব্যাট থেকে আসে ৫১ বলে ৬৪ রান। চার মেরে ফিফটি পূর্ণ করেন নাঈম। ৪৩ বলে এ মাইলফলক পূর্ণ হয়েছে তার। তবে সাকিবের পর নেমে নুরুল হাসান বেশিদূর এগোতে পারেননি। মাকসুদের বলে তুলে মেরেছিলেন, টাইমিংটাও ভালোই হয়েছিল। তবে লং-অফে জিশানের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
এদিন সুবিধা করতে পারেননি আফিফ হোসেনও। কলিমুল্লাহর বলে ৫ বলে ১ রান করে ফিরে গেছেন তিনি। দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেননি মুশফিকুর রহিমও। আট নম্বরে নেমে ব্যর্থ হয়েছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবলখ্যাত এই ব্যাটসম্যান। ফায়াজ বাটের বলে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ৬ রান করে। শেষদিকে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও আস্থার প্রতীক হয়ে উঠতে পারেনি। বিলাল খানের বলে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হয়ে ফিরেছিন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে ১০ বলে ১৭ রান।
ওমানের হয়ে বিলাল খান ৩টি, ফায়াজ বাট নেন ৩টি করে উইকেট। এছাড়া কলিমউল্লাহ নিয়েছেন ২টি উইকেট।
এর আগে ’ডু আর ডাই’ ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
এই ম্যাচে একটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ দল। একাদশে ছিলেন না সৌম্য সরকার। তার পরিবর্তে খেলেন নাঈম শেখ।