কুমিল্লায় কুরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে যারা অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে তাদের কেউ ছাড় পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার (১৩ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর খামারবাড়িতে শারদীয় দুর্গাপূজার মহাষ্টমীর শুভেচ্ছা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এই কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার সরকার, সংখ্যালঘু বান্ধব সরকার। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী আছেন বলেই পূজা আজকে দুর্গোৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রতিটা পূজা সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।
কুমিল্লার ঘটনার প্রসংগে সেতু মন্ত্রী বলেন, কুমিল্লার ঘটনা আজকে একটু ভয়-ভীতির আবহ সৃষ্টি করেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কুমিল্লায় যেটা সংঘটিত হয়েছে, সেটা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাজ। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি তাণ্ডব চালাতে চেয়েছিলো। পূজামণ্ডপে কুরআন শরীফ রেখে এত বড় একটি উৎসবকে কালিমালিপ্ত করতে চেয়েছিলো।
তিনি আরও বলেন, আমরা সতর্ক রয়েছি। যারা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলো, তারা ব্যর্থ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, এই ঘটনায় যারাই জড়িত তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে সরকার বদ্ধপরিকর।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অভয় দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার আমলে প্রতিবছর শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব পালিত হচ্ছিলো, এটাই তাদের গাত্রদাহের কারণ। প্রতিবছর দেশব্যাপী ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মণ্ডপে পূজা উদযাপিত হয়, যেমন পহেলা বৈশাখ, ঈদসহ অন্যান্য ধর্মের উৎসব পালিত হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা হিন্দুদের মন্দিরে, বাড়িঘরে হামলা চালায়, তারা কোনো দলের নয়, তাদের পরিচয় হচ্ছে দুর্বৃত্ত। এই দুর্বৃত্তরা আমাদের সবার শত্রু। হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলে এই দুর্বৃত্তদের আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকুন। আমি অভয় দিচ্ছি, আপনারা ভয় পাবেন না। কোনো দুর্বৃত্ত আপনাদের ওপর হামলা চালিয়ে, আপনাদের মন্দিরে হামলা চালিয়ে ছাড় পাবে না। শেখ হাসিনার সরকার কাউকে ছাড় দেবে না।
ভারতের সংগে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের সংগে দীর্ঘ ২১ বছর একটি অবিশ্বাস এবং সন্দেহের দেয়াল দাঁড়িয়েছিলো। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে সেই দেয়াল ভেঙে দিয়েছেন। ভারতে সংগে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, সেটাতে কেউ চিড় ধরাতে পারবে না।
এদিকে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে কুমিল্লায় জেলা শহরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। দুপুরে বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এর আগে একটি মন্দিরকে কেন্দ্র করে সোশাল মিডিয়ায় নানান খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
এই বিষয়ে বিজিবির কুমিল্লা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফজলে রাব্বি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘কুমিল্লায় যাতে কোনো ধরনের ‘আনরেস্ট’ পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেজন্য দুপুরে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।’
বিকালে ধর্ম মন্ত্রণালয় এক জরুরি ঘোষণায় বলেছে, সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, কুমিল্লায় পবিত্র কুরআন অবমাননা সংক্রান্ত খবর আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। খবরটি খতিয়ে দেখার জন্য ইতিমধ্যে আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ প্রদান করেছি। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে যে কেউ এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকুক তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। সকলকে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো।