আলোচিত ধনকুবের মুসা বিন শমসের বলেছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ভুয়া অতিরিক্ত সচিব আবদুল কাদের একজন মিথ্যাবাদী। আমিও প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমি এই ভুয়া অতিরিক্ত সচিবের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। তার বিরুদ্ধে মামলা করব।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মিন্টু রোডে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয় থেকে বের হয়ে মুসা বিন শমসের এ মন্তব্য করেন৷ তাঁকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বের হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার আবদুল কাদেরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মুসা বিন শমসেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মুসা বিন শমসের সাংবাদিকদের বলেন, একজন ফ্রড লোক অতিরিক্ত সচিব পরিচয়ে ভুয়া কার্ড ছাপিয়ে আমার অফিসে গিয়েছিল। আমার সঙ্গে বিভিন্ন সময় ছবি তুলেছিল এবং সে মাঝেমধ্যে আমার সঙ্গে বসে ঊর্ধ্বতন লোকদের সঙ্গে কথা বলতেন। তাদের মধ্যে আইজিপি, আর্মির জেনারেলসহ ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলতেন। আমার বিশ্বাস ছিল যে তিনি (আবদুল কাদের) অতিরিক্ত সচিব। কিন্তু পরে প্রমাণিত হলো তিনি অতিরিক্ত সচিব না, তিনি একজন ভুয়া অতিরিক্ত সচিব। পরে তাকে বের করে দিলাম আমি।
‘ডিবি আমাকে আবদুল কাদেরের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং আমি যা যা জানি সবকিছু স্পষ্ট বলেছি। আমার বক্তব্যে ডিবি পুলিশ সন্তুষ্ট। আবদুল কাদের একজন মিথ্যাবাদী। আমিও প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমি ভুয়া অতিরিক্ত সচিব আবদুল কাদেরের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
ভুয়া অতিরিক্ত সচিব আবদুল কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা করবেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে মুসা বিন শমসের বলেন, ‘আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমি তার বিরুদ্ধে মামলা করব।’
আবদুল কাদের আপনার আইন উপদেষ্টা কিনা জানতে চাইলে মুসা বলেন, ‘আবদুল কাদের মিথ্যা কথা বলেছে। তিনি আমার আইন উপদেষ্টা ছিলেন না।’
বিভিন্ন সময় আপনার সঙ্গে আবদুল কাদেরের ছবি দেখেছি আমরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুসা বিন শমসের বলেন, ‘আমার সঙ্গে অনেক লোক এসে ছবি তোলে। কেউ ছবি তুলতে চাইলে আমি তাকে না করতে পারি না। আমার ছবি নিয়ে যদি কেউ প্রতারণা করে সেটার দায়-দায়িত্ব আমি নিতে পারি না।’
আবদুল কাদেরের সঙ্গে আপনার একটি ২০ কোটি টাকার চেকের লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য স্পষ্ট করবেন কি না, এমন প্রশ্নে এই ধনকুবের বলেন, ‘ওটা আমি ফেরত দিয়ে দিয়েছি।’
এর আগে আজ বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে মেরুন রঙের একটি গাড়িতে করে মিন্টু রোডে ডিবি কার্যালয়ে প্রবেশ করেন মুসা বিন শমসের। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও ছেলে। এরপর ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
জিজ্ঞাসাবাদের আগে গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘আবদুল কাদের চৌধুরীর আসল নাম, আবদুল কাদের মাঝি। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা দশম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু, তিনি প্রতারণামূলকভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড ছাপিয়ে, নিজেকে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পরিচয় দিতেন। নিজের এক কোটি ২০ লাখ টাকার প্রাডো গাড়িতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্টিকার লাগিয়ে ঢুকতেন সচিবালয়ে। এবং আমরা শুনেছি, এভাবে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আবদুল কাদের মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব তথ্য আমাদের কাছে আছে। আমরা সব মিলিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করব।’
এসব নানা অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৭ অক্টোবর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসা থেকে বাইরে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার করা হয় আবদুল কাদেরকে। একই সঙ্গে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন হলেন সততা প্রোপার্টিজের চেয়ারপারসন ও আবদুল কাদেরের দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন চৌধুরী ছোঁয়া, অফিস ম্যানেজার শহিদুল আলম ও অফিস সহায়ক আনিসুর রহমান।
এর আগে গত শনিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘আবদুল কাদেরের আদি বাড়ি নোয়াখালীর সুবর্ণচরের ভূমিহীন এক কৃষক পরিবারে। তাঁর বাবা জীবিকার সন্ধানে সন্দ্বীপে পাড়ি জমিয়েছিলেন। মাছ ধরে ও মাঝির কাজ করে জীবিকা উপার্জন করতেন। এমন ভূমিহীন ভাসমান আবদুল কাদেরের ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এর মধ্যে গুলশান-১ নম্বরের জব্বার টাওয়ারের প্রায় ছয় হাজার স্কয়ার ফুট আয়তনের অফিস রয়েছে। কারওয়ান বাজারেও রয়েছে আরও একটি অফিস। মিরপুর-৬ নম্বরে বসবাস করলেও একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে তার।’
ডিবি প্রধান আরও জানান, আবদুল কাদের নয়তলা বাড়ি কিনেছেন গাজীপুরের বোর্ডবাজারে। গাজীপুরের পুবাইলে রয়েছে আট বিঘার বাগানবাড়ি। ডাচ-বাংলা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকে রয়েছে তাঁর একাধিক অ্যাকাউন্ট। যেখানে রয়েছে লাখ লাখ টাকা। অঢেল সম্পদের মালিক এ কাদেরের নেই কোনো বৈধ উপার্জন। প্রতারণা ও মিথ্যা তাঁর একমাত্র পুঁজি।’
আবদুল কাদের, তাঁর স্ত্রী ও সহকর্মীদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় অস্ত্র মামলা, তেজগাঁও থানায় প্রতারণার মামলা রয়েছে। এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে পাসপোর্ট জালিয়াতি, বিভিন্ন প্রতারণা, ব্যাংকে নিয়োগ বিষয়ে কমপক্ষে অর্ধ ডজন মামলাও রয়েছে বলে জানায় ডিবি।