রোহিঙ্গা শরণার্থী নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে এ ঘটনায় তদন্ত করতে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে সাত লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তাদের বড় একটি গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মুহিবুল্লাহ।-খবর রয়টার্সের
বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিউিইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফানি ট্রেম্বলে বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকিন বলেন, মুহিবুল্লাহকে হত্যার ঘটনায় তিনি দুঃখভারাক্রান্ত ও বিভ্রান্তি বোধ করছেন। বিশ্বজুড়ে রোহিঙ্গা মুসলমানদের অধিকার আদায়ে তাকে সাহসী ও তুখোড় সমর্থক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মুহিবুল্লাহকে।
তিনি বলেন, তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্বচ্ছা ও পূর্ণ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে এতে জড়িত ঘৃণ্য অপরাধীদের শাস্তির মুখোমুখি করা যায়।
এদিকে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় অবশেষে মামলা দায়ের হয়েছে। শুক্রবার (০১ অক্টোবর) সকালে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন উখিয়া থানার ওসি আহমেদ মঞ্জুর মোরশেদ।
তিনি জানান, মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় তার ভাই মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করে বৃহস্পতিবার রাতে মামলা করেছেন।
এ দিকে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর বুধবার রাতেই শরণার্থী শিবিরের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয় এপিবিএনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। যেখানে মুহিবুল্লাহ খুন হন, সেই লম্বাশিয়াসহ আশপাশের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। শুক্রবারও সকাল থেকে লম্বাশিয়া ক্যাম্পের বিভিন্ন স্টেশনের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ক্যাম্পে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে লম্বাশিয়াসহ আশপাশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এপিবিএন পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য নিয়োজিত রয়েছে।
খুনের কারণ জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল বলেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিতেই মুহিবুল্লাহ খুন হয়েছে, এটা নিশ্চিত। কিন্তু কেন খুন করল, কারা খুন করল। তা এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা খোঁজখবর নিচ্ছে। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে জানান তিনি।
মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও খুনিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।