সামনে সুযোগ ছিল মোটা অঙ্কের বেতনে চাকরি করার। সঙ্গে নিরাপদ ভবিষ্যৎ। তবে তা বাদ দিয়ে রোদে পুড়ে, অনিশ্চয়তায় ঘেরা ২২ গজের চ্যালেঞ্জ নেয়াটাকেই অগ্রাধিকার দিলেন। ভেঙ্কটেশ আইয়ার খুব সম্ভবত সঠিক সিদ্ধান্তটাই নিয়েছিলেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রথম দুই ম্যাচ খেলেই যে জাত চেনাতে শুরু করেছেন ২৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক থাকাতেই পড়াশোনা চাপ থাকা সত্ত্বেও ব্যাট-বলের সম্পর্কটা চালিয়ে গিয়েছেন। কলেজ পরীক্ষা দিয়েই অংশ নিতেন মধ্যপ্রদেশের অনুশীলন ম্যাচে। সেই ম্যাচে শতক হাঁকান, সঙ্গে পাস করেন পরীক্ষাতেও। সেই পরিশ্রমের প্রতিদান পেয়েছেন।
অর্থনীতিতে এমবি করা ভেঙ্কটেশ ২০১৮ সালে প্রস্তাব পান ভারতের শীর্ষ চারে থাকা অ্যাকাউন্টিং সংস্থায় চাকরি করার। তবে সময়ে বাধা অফিসে মন টানেনি তার। প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে ক্রিকেটের সঙ্গেই নিজেকে জড়িয়ে রাখতে চান। ডাক পান রঞ্জি দলে। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে আলো কেড়ে নিতে শুরু করেন নিজের দিকে।
মুস্তাক আলি ট্রফিতে পাঁচ ইনিংসে তার রান ২২৭, স্ট্রাইক রেট ১৪৯.৩৪। শুধু টি২০ ক্রিকেটেই নয়, আইয়ারের দাপট ছিল ৫০ ওভারের খেলাতেও। বিজয় হাজারে ট্রফিতে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ১৪৬ বলে ১৯৮ রানের ইনিংস খেলেন মধ্যপ্রদেশের এই ব্যাটসম্যান। মূলত এই ইনিংসটাই দৃষ্টি কাড়ে কলকাতা নাইট রাইডার্সের। মুম্বাই গিয়ে ট্রায়াল দেন, পাস করেন। মাত্র ২০ লাখ রুপিতে এই অলরাউন্ডারকে দলে ভেড়ায় শাহরুখ খানের দল।
তবে শুরুর শুরুটা সুখকর ছিল না। আইপিএলের প্রথম পর্বে সেরা একাদশে সুযোগ পাননি। ডাগআউটে বসে অপেক্ষা করেছেন ম্যাচের পর ম্যাচ। দ্বিতীয় পর্বে খেলোয়াড় সঙ্কটে কপাল খোলে ভেঙ্কটেসের। সাকিবদের দলে প্রথম সেরা একাদশে নাম আসে গত মঙ্গলবার। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে লো স্কোরিং ম্যাচে খেলেন ২৭ বলে ৪১ রানের অপরাজিত ইনিংস।
অভিষেক ম্যাচে এমন ইনিংসের পর স্বাভাবিকভাবেই এই অলরাউন্ডার আলোচনায় আসেন। সেই আলোচনা আরও বাড়ল গতরাতের ম্যাচের পর। আইপিএলে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই হাঁকালেন অর্ধশতক। ৩০ বলে ৫৩ রানের মারকুটে ইনিংসটা আবার ট্রেন্ট বোল্ট-জাসপ্রিত বুমরাহদের মতো বোলারদের বিপক্ষে।
ভেঙ্কটেস ঝড়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ২৯ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের বড় জয় পায় কলকাতা। যদিও বা প্রথম দুই ম্যাচে কেবল ব্যাটসম্যান ভেঙ্কটেসকেই দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। ঘরোয়া ক্রিকেটে ৬ নম্বরে ব্যাট করতে নামা এই ক্রিকেটার মিডিয়াম পেস বোলিংটাও করেন ঠিকঠাক। টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত নামের পাশে যোগ করেছেন ২১ উইকেট, ইকোনমি সাতের-ও কম!
তবে ৬ নম্বর ব্যাটসম্যান থেকে ওপেনার ভেঙ্কটেসে পরিণত হওয়ার পেছনে কৃতিত্ব মধ্যপ্রদেশের কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের। মুস্তাক আলি ট্রফিতে তাকে ওপেনিং পজিশনে খেলিয়েই নতুন এক ভেঙ্কটেস তৈরি করেন তিনি। যদিও বা প্রথম দিকে এমনটায় সম্মতি ছিল না খোদ এই ক্রিকেটারের। ওপেনার হিসেবে ব্যর্থ হলেও দল থেকে বাদ পড়বেন না- এমন চুক্তিতেই ইনিংস উদ্বোধনীর দায়িত্ব কাঁধে নেন এই কেকেআর ক্রিকেটার।