পৃথিবীকে আঘাত করতে পারে বিশাল এই গ্রহাণু!
অ্যাপোফিস নামে একটি বিশাল আকারের গ্রহাণু পৃথিবীর খুব কাছ দিয়েই যাবে। কিন্তু অন্তত শত বছর পৃথিবীকে আঘাত করবে না। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা এই গ্রহাণুর কথা বলছেন।
২০২৯ সালের ১৩ এপ্রিল শুক্রবার অ্যাপোফিস পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে যাবে। ৩৪০ মিটার আকারের এই গ্রহাণু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে মাত্র ৩১ হাজার কিলোমিটার দূর দিয়ে যাবে। এ দূরত্ব অনেক কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটের দূরত্বের চেয়েও কম। অ্যাপোফিসের বিশাল আকারের জন্য এই গ্রহাণু খালি দেখবেন পৃথিবীর ২০০ কোটি মানুষ।
এই গ্রহাণু প্রথমে দেখবেন সাউদার্ন হ্যামিস্ফেয়ারের বাসিন্দারা। এই গ্রহাণু বড় তারার মতো দেখা দেবে পৃথিবীর আকাশে। পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাবে এই গ্রহাণু। প্রথমে অস্ট্রেলিয়া, এরপর ভারত মহাসাগর এরপর পাড়ি দেবে আফ্রিকা।
সৌভাগ্যবশত এই গ্রহাণুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখন পর্যন্ত পৃথিবীকে আঘাত করার কোনো সম্ভাবনা নেই এই গ্রহাণুর। কিন্তু এখনো বিজ্ঞানীরা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনি এই গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত করবে কিনা। সংঘর্ষের ঝুঁকি কম থাকলেও মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে এই গ্রহাণু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ঘেঁষে যেতেও পারে।
অ্যাপোফিস বিপজ্জনক একটি গ্রহাণু। এই গ্রহাণুর মতো গ্রহাণুগুলো পৃথিবীর আশপাশে থাকে আর শত বছর অবস্থান করে।
মহাকাশ গবেষকরা বলছেন, এই গ্রহাণুর বিশেষত্ব হলো, এই দশকে এটিই সবচেয়ে বড় আর বিপজ্জনক গ্রহাণু, যেটি পৃথিবীর পাশ দিয়ে যাবে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, অ্যাপোফিস পৃথিবীকে আঘাত করবে না। এরপরও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি আর নাসার কাছে টানা ১৭ বছর এই গ্রহাণু পৃথিবীর জন্য ঝুঁকির তালিকায় আছে।
২০০৪ সালের সালের ১৯ জুন অ্যাপোফিস আবিস্কার করেন দুই মহাকাশ বিজ্ঞানী। ২০০৫ সালে অ্যাপোফিসের নামকরণ করা হয়। অ্যাপোফিস নামের অর্থ প্রাচীন গ্রিক শয়তান। পাথুরে এ গ্রহাণু নিকেল আর লোহা দিয়ে তৈরি। এর আকৃতি মহাকাশে পাথুরে বাদামের মতো।
এই গ্রহাণু সৌরজগতের শুরুর দিকে সৃষ্টির হয়েছে। অ্যাস্টেরয়েড বেল্টে এটি ছিল ৪৬০ কোটি বছর। এই গ্রহাণু অনেক বড় কোন গ্রহাণুর অংশবিশেষ। সংঘর্ষের কারণে এই গ্রহাণু বেল্ট থেকে ছিটকে পড়েছে। এখন পৃথিবীর কাছাকাছি আসছে। প্রথমে মহাকাশ গবেষকরা বেশ উচ্ছ্বসিত ছিল এই গ্রহাণুর আবিষ্কার নিয়ে। কিন্তু উচ্ছ্বাস ম্লান হয়ে যায়, কারণ এই গ্রহাণু পৃথিবীর কক্ষপথে আসবে।
রাডারের তথ্য বলছে, ২০২৯ সালে এই গ্রহাণুর পৃথিবীকে আঘাত করার প্রায় ৩ শতাংশ সম্ভাবনা আছে। কোনো গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত করলে এর পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। ২০২৯ সালের পর এই গ্রহাণু পৃথিবীর আশপাশেই থাকবে কিনা তা নির্ভর করে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ওপর।
২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অ্যাপোফিস সূর্যের খুব কাছে থাকায় এর গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা দিতে পারেনি বিজ্ঞানীরা। হাজার বছরে একবার এত বড় গ্রহাণু পৃথিবীর কাছ দিয়ে অতিক্রম করে। তাই এ ধরনের গ্রহাণু খালি চোখে দেখতে পারাটা সৌভাগ্যের বলে মনে করেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। তবে অ্যাপোফিস পৃথিবীকে আঘাত করবে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে কিছুই বলতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা।