বিশ্বকাপ ফুটবল দু’বছর নাকি চার বছর পরপর হবে, তা চূড়ান্ত করতে বৈঠক ডেকেছে ফিফা। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ২১১টি সদস্য দেশ, ক্লাব, লিগ ও ফুটবলারদের সংগঠনগুলোর মতামত নেবে ফিফা।
এর আগে ফিফার টেকনিক্যাল ডিরেক্টর আর্সেন ওয়েঙ্গারের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি প্রস্তাব দেয়, দু’বছর পরপর বিশ্বকাপ আয়োজনের। তবে এতে তীব্র আপত্তি জানায় ইউরোপ (উয়েফা) ও লাতিন আমেরিকার (কনমেবল) ফুটবল ফেডারেশন। আর তাই এবার সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান করতে বৈঠক ডেকেছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা।
আর্সেন ওয়েঙ্গার বলেন, ‘২০২৮ সাল থেকেই দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ আয়োজন করা সম্ভব। আর দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ হলেও খেলোয়াড়দের ওপর চাপ পরবে না। তারা সাধারণভাবে যে কটি ম্যাচ খেলে থাকেন সে কয়টি ম্যাচই খেলবেন।’
গত ২১ মে ৭১তম ফিফা কংগ্রেসে দু’বছর পরপর বিশ্বকাপ আয়োজনের পরিকল্পনার কথা প্রথম জানানো হয়। তাদের সমর্থন করে মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (কনকাকাফ) এবং এশিয়া ফুটবল সংস্থা (এএফসি)।
চলতি মাসের শুরুর দিকে বিশ্বকাপজয়ী ও সাবেক ফুটবলারদের মতামত নিয়েছিল ফিফা। বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ এই সংস্থা মনে করে, দু’বছর পরপর বিশ্বকাপ হলে অনেক বেশি দেশ খেলার সুযোগ পাবে। আয়ও বাড়বে ফিফার। এই অর্থ তারা ফুটবলে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর উন্নয়নে ব্যবহার করবে।
ডেনমার্কের সাবেক ফুটবলার পিটার স্মাইকেলও ফিফাকে সমর্থন জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার মতে, প্রতি দুই বছর পরপর যদি বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয়, তাহলে খুবই ভালো হবে। কারণ আমাদের মত ছোট দেশগুলো থেকে যারা আসে প্রতি চার বছর পরপর বিশ্বকাপের জন্য কোয়ালিফাই করাটা সেসব দেশের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। যদি প্রতি দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ হয়, তাহলে সেখানে ছোট দেশগুলো উপকৃত হবে বেশি।’
ফিফার উদ্যোগের বিরোধিতা শুরু থেকেই করেছে শক্তিশালী দুই সংস্থা উয়েফা ও কনমেবল। তারা মনে করে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বিশ্বকাপ তার জৌলুস হারাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইউরো ও কোপা আমেরিকার মতো টুর্নামেন্টগুলোও।
উয়েফা সভাপতি বলেন, ‘আমরা দুই বছর পরপর বিশ্বকাপে খেলব না। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোও খেলবে না বলে জানতে পেরেছি। আমি মনে করি, এটা কখনো হবে না। কারণ, এটি ফুটবলের স্বতন্ত্র নষ্ট করবে। প্রতি মৌসুমে বিশ্বকাপ হবে খেলোয়ারদের জন্য আত্মঘাতী। এটা হলে মেয়েদের বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।’
দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ আয়োজন করা হলে সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে ফুটবল ক্লাবগুলো। এমনিতেই আন্তর্জাতিক ফুটবলের জন্য ফুটবলারদের ছাড়তে আপত্তি থাকে ইউরোপের শীর্ষ লিগের দলগুলোর। এখন প্রতি দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ ও ইউরো আয়োজনের কথা উঠছে। তার মানে আর দুই বছর পর পর নয়, প্রতি বছরই কোনো না কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে হবে ফুটবলারদের। এই বাড়তি ফুটবল খেলাটা ক্লাব ক্যারিয়ারকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিতে পারে।
এদিকে, দুই বছর পরপর বিশ্বকাপের আয়োজন করা হলে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের উন্নয়ন ঘটবে। বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের চার দেশের জাতীয় ফুটবল ফেডারেশন এমনটাই মনে করে।